গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধানসহ চূড়ান্ত অনুমোদন

গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধানসহ চূড়ান্ত অনুমোদন

জাতীয় ডেস্ক

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ ২০২৫’ চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে অনুষ্ঠিত এই ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, আইনে গুমের অপরাধকে চলমান অপরাধ (continuing offence) হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং এ অপরাধে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

প্রেস সচিব জানান, দীর্ঘ আলোচনা ও পর্যালোচনার পর এই অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আইনটিতে গোপন আটক কেন্দ্র স্থাপন বা ব্যবহার—যা ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত—তাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও তদন্ত কমিশনকে গুম সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

নতুন অধ্যাদেশে গুম প্রতিকারের লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের ১২০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্নের বাধ্যবাধকতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের অধিকার সুরক্ষা, ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং আইনগত সহায়তা নিশ্চয়তার বিধানও রাখা হয়েছে। পাশাপাশি গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার এবং সুরক্ষার উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ তহবিল গঠন ও তথ্যভাণ্ডার প্রতিষ্ঠার কথাও এতে উল্লেখ রয়েছে।

ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম আরও জানান, বৈঠকে জাতীয় লজিস্টিক নীতি এবং ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকাও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জাতীয় নগরনীতি নিয়ে আলোচনা হলেও এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

প্রেস সচিব বলেন, গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ ২০২4 সালের ২৯ আগস্ট ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রোটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’-এর অংশীদার হয়। এ আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুপাতে নতুন এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে, যা গুম প্রতিরোধে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।

সরকারি সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, নতুন আইনটি কার্যকর হলে দেশে গোপন আটক কেন্দ্র বা আয়নাঘর প্রতিষ্ঠা এবং গুমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে কঠোর আইনি কাঠামো তৈরি হবে। এতে ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে একটি সুনির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অধ্যাদেশটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক আস্থা বৃদ্ধি এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আইন বিশেষজ্ঞরাও অধ্যাদেশের বিভিন্ন দিক, বিশেষ করে বিচার প্রক্রিয়ার সময়সীমা ও ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা, বাস্তব প্রয়োগে কার্যকারিতা নিশ্চিতের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ ২০২৫’ এখন রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর গেজেট আকারে প্রকাশের মাধ্যমে কার্যকর হবে বলে সরকারি সূত্র জানিয়েছে।

জাতীয়