জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতের হুঁশিয়ারি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতের হুঁশিয়ারি

 রাজনীতি ডেস্ক

রাজধানীতে আগামী ১১ নভেম্বর মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পাঁচ দফা দাবি উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি রাজনৈতিক দল। দাবিগুলো না মানা হলে রাজধানী ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এর আগে আট দলের প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি জমা দেন।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “আপনারা আমাদের পাঁচ দফা দাবি মেনে নিয়ে জুলাই সনদের এই গণআকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। তা না হলে ১১ নভেম্বর রাজধানী ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, উপদেষ্টা পরিষদ দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

সমাবেশে তিনি আরও বলেন, “আগামী ১১ নভেম্বর আট দল আয়োজিত মহাসমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে ঢাকা মুখরিত হবে। এর আগে সরকার যদি দাবিগুলো মেনে নেয়, তবে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ থাকবে।”

পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—
১. জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য সরকারি আদেশ (গেজেট) জারি করা এবং নভেম্বরে এ বিষয়ে গণভোট আয়োজন করা।
২. আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উভয় কক্ষ বা উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালু করা।
৩. অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সকল রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা।
৪. অতীতের রাজনৈতিক সহিংসতা, দমন-পীড়ন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার কার্যকর ও দৃশ্যমান করা।
৫. জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা, যাদের তারা ‘স্বৈরাচারের দোসর’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

এর আগে পল্টন মোড়ে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরও একই দাবি জানান। তিনি বলেন, “যদি দাবি না মানা হয়, তাহলে ১১ নভেম্বর ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচির মাধ্যমে রাজধানীকে জনতার নগরীতে পরিণত করা হবে।”

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্মমহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির সাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজি, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইহজার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হাক্কানী, জাগপার মুখপাত্র প্রকৌশলী রাশেদ প্রধান এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হক।

আট দলীয় এই জোটের মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মতিঝিলের শাপলা চত্বর ও পল্টন এলাকায় বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা সমবেত হতে থাকেন। বেলা ১১টার পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে তারা পুরানা পল্টনে মিলিত হন। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পর দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই দাবি ও কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জামায়াত ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে তাদের অবস্থান পুনরায় সুসংহত করার চেষ্টা করছে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, ১১ নভেম্বরের মহাসমাবেশ সফল করতে প্রতিটি রাজনৈতিক দল লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করবে, যা সমন্বিতভাবে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।

রাজনীতি