আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) রাতে বিজয় ভাষণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরাসরি উদ্দেশ করে বলেন, “আমি এমন এক নিউইয়র্ক সিটি হলে প্রবেশ করছি, যেখানে বিভাজন ও পক্ষপাতের রাজনীতি আর চলবে না। ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি শুনছেন। আমার কথা মনে রাখুন, আওয়াজটা বাড়ান।”
ভোট গণনার ৯১ শতাংশ শেষ হওয়ার পর দেখা যায়, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোর চেয়ে ৮ শতাংশের বেশি ভোটে এগিয়ে আছেন মামদানি। এই ফলাফল ডেমোক্র্যাটিক সমাজতান্ত্রিক প্রার্থীর জন্য এক বড় উত্থান এবং কুয়োমোর রাজনৈতিক প্রভাবের পতনের ইঙ্গিত দেয়। কুয়োমো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ব্যয়বহুল প্রচারণা চালালেও শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন।
ব্রুকলিনে সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া উচ্ছ্বসিত ভাষণে মামদানি বলেন, “নিউইয়র্ক আজ প্রমাণ করেছে—এই শহরই অন্ধকার রাজনীতির সময়ে আলোর পথ দেখাবে।” তিনি আরও বলেন, “এখানে আমরা ভালোবাসা ও মানবতার পক্ষে দাঁড়াই। আপনি অভিবাসী হোন, ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের সদস্য হোন, কৃষ্ণাঙ্গ নারী হোন যাদের ট্রাম্প সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন, কিংবা একক মা হোন যিনি এখনো খাদ্যদ্রব্যের দাম কমার অপেক্ষায় আছেন—আপনিও নিউইয়র্কের অংশ।”
নিউইয়র্ক শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে জোহরান মামদানি বলেন, “এখন আর ইসলামবিদ্বেষের প্রচার করে কেউ নিউইয়র্কে জিততে পারবে না।” তিনি ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, “যদি এমন কোনো শহর থাকে, যা ট্রাম্পকে দেখাতে পারে কীভাবে তাকে হারাতে হয়, তাহলে সেটি সেই শহর, যেখান থেকেই তার উত্থান ঘটেছিল।” উল্লেখযোগ্যভাবে, ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন ট্রাম্প নিউইয়র্কেই জন্মগ্রহণ করেন এবং এখান থেকেই তার পারিবারিক ব্যবসার সূচনা ঘটে।
উচ্ছ্বাসভরা জনতার সামনে মামদানি বলেন, “কোনো স্বৈরশাসককে পরাজিত করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সেই ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়া, যা তাকে ক্ষমতা দিয়েছে। এভাবেই আমরা ট্রাম্পকে থামাবো, এবং তার পরের জনকেও।”
বিজয় ভাষণে মামদানি তার নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন ভাড়াটিয়াদের অধিকার রক্ষায় বাড়িওয়ালাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা, ধনীদের সুবিধাভোগী দুর্নীতির সংস্কৃতি বন্ধ করা, শ্রমিকদের অধিকার সম্প্রসারণ ও ইউনিয়নের পাশে থাকার। তিনি বলেন, “আমরা জানি, যেমন ট্রাম্পও জানেন, যখন শ্রমিকদের অধিকার অটুট থাকে, তখন তাদের শোষণ করতে চাওয়া কর্তা শ্রেণি ক্ষুদ্র হয়ে পড়ে।”
নিউইয়র্ককে “অভিবাসীদের শহর” হিসেবে বর্ণনা করে মামদানি বলেন, “এই শহর অভিবাসীদের হাতে গড়া, তাদের দ্বারাই চালিত, এবং আজ থেকে অভিবাসীদের হাতেই নেতৃত্ব থাকবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যদি আমাদের কাউকে আঘাত করতে চান, আগে আমাদের সবাইকে মোকাবিলা করতে হবে।”
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, “৫৮ দিন পর যখন আমরা সিটি হলে প্রবেশ করব, জনগণের প্রত্যাশা অনেক থাকবে, এবং আমরা তা পূরণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”
একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাটদের আরও উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। মিকি শেরিল নিউ জার্সির গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন এবং অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার ভার্জিনিয়ার প্রথম নারী গভর্নর হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন।
রাতেই ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ পোস্ট করে এসব জয়ের প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা অবিলম্বে ফিলিবাস্টার প্রথা বাতিল করে নতুন ভোটাধিকারের সংস্কার আনে, যার মধ্যে থাকবে কঠোর ভোটার আইডি আইন এবং ডাকযোগে ভোট প্রদান নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব।
এই নির্বাচনের ফলাফলে নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা, যেখানে অভিবাসী ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারার প্রতিনিধিরা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের স্থানে উঠে আসছেন।


