পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করল ডিএসই

পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করল ডিএসই

অর্থনীতি ডেস্ক

একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এক নোটিশে এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেয় সংস্থাটি।

ডিএসইর বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, স্থগিত হওয়া ব্যাংকগুলো হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই ব্যাংকগুলোর শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

লেনদেন স্থগিতের কারণ হিসেবে ডিএসই জানায়, ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর ধারা ১৫ অনুযায়ী ৫ নভেম্বর থেকে ব্যাংকগুলোকে ‘অকার্যকর প্রতিষ্ঠান’ (non-performing entities) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অধ্যাদেশ অনুসারে, এসব ব্যাংক বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে পুনর্গঠনের আওতায় রয়েছে।

ডিএসই আরও জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা পেয়েছে যে, ৫ নভেম্বর জারি করা চিঠির মাধ্যমে এসব ব্যাংককে ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুসারে পরিচালিত হতে হবে। একইসঙ্গে, বাংলাদেশ ব্যাংক আরেকটি চিঠির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একীভূতকরণের মাধ্যমে আর্থিকভাবে দুর্বল এই পাঁচ ব্যাংককে একটি নতুন ইসলামী ব্যাংক কাঠামোর আওতায় আনার প্রস্তুতি চলছে। এর লক্ষ্য হলো ব্যাংকগুলোর চলমান তারল্য সংকট ও শেয়ারহোল্ডারদের আর্থিক অনিশ্চয়তা নিরসন করা।

এদিকে, বুধবার (৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, উল্লিখিত পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য বর্তমানে “শূন্যের নিচে” নেমে গেছে। ফলে এসব ব্যাংকের শেয়ারের বাজারমূল্য শূন্য হিসেবে গণ্য হবে এবং কোনো শেয়ারহোল্ডার ক্ষতিপূরণের আওতায় আসবেন না।

গভর্নর আরও জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক একীভূত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর সম্পদ ও দায়সমূহ মূল্যায়ন করছে। এর পর ব্যাংকগুলোকে পুনর্গঠন করে নতুন মালিকানা কাঠামোতে রূপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রক্রিয়ার আওতায় আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের জন্য একটি নজিরবিহীন পদক্ষেপ, যা দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনা ও তারল্য সংকটে থাকা ইসলামী ব্যাংকগুলোকে পুনরুদ্ধারে একটি কাঠামোগত সংস্কারের সূচনা হতে পারে। তবে শেয়ারবাজারে এর প্রভাব নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে ব্যাংক খাতনির্ভর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

ডিএসই জানিয়েছে, পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকবে। একীভূতকরণ ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর লেনদেন পুনরায় চালু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অর্থ বাণিজ্য