আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্কিন বিচার বিভাগ ও বোয়িং কোম্পানির মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তির অংশ হিসেবে টেক্সাসের এক ফেডারেল বিচারক বৃহস্পতিবার বোয়িং-এর ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমানের দুইটি মারাত্মক দুর্ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত ফৌজদারি অভিযোগ খারিজ করেছেন। ২০১৮ ও ২০১৯ সালের ওই দুর্ঘটনাগুলোতে মোট ৩৪৬ জন নিহত হন।
বিচার বিভাগের সঙ্গে বোয়িং-এর এই সমঝোতা চুক্তি ২০২৪ সালের ২৩ মে ঘোষণা করা হয়েছিল। ফেডারেল কোর্টে জমা দেওয়া নথি অনুযায়ী, চুক্তির আওতায় বোয়িং ১.১ বিলিয়ন ডলার প্রদানের বিনিময়ে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা এক ফৌজদারি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। অভিযোগটি ছিল ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়ায় প্রতারণার অভিযোগে।
এই চুক্তির ফলে আগামী জুনে টেক্সাসের ফোর্ট ওয়ার্থে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকা ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে গেছে। আদালতের এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান মামলাটির আনুষ্ঠানিক নিষ্পত্তি হলো।
২০১৮ সালের অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ার ফ্লাইট ৬১০ দুর্ঘটনায় ১৮৯ জন এবং ২০১৯ সালের মার্চে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৩০২ দুর্ঘটনায় ১৫৭ জন প্রাণ হারান। তদন্তে দেখা যায়, বিমানের ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা “ম্যানুভারিং ক্যারেক্টারিস্টিকস অগমেন্টেশন সিস্টেম” (এমসিএএস) বারবার ত্রুটিপূর্ণভাবে সক্রিয় হয়ে বিমানগুলোর ভারসাম্য নষ্ট করেছিল, যার ফলেই দুটি দুর্ঘটনা ঘটে।
বোয়িং জানিয়েছে, তারা এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে এবং ভবিষ্যতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কোম্পানিটি বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানায়, “আমরা বিচার বিভাগের সঙ্গে চুক্তির সব শর্ত পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাশাপাশি, নিরাপত্তা, মান নিয়ন্ত্রণ ও সম্মতি সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ কর্মসূচিগুলো আরও শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”
এই সমঝোতা চুক্তির সমালোচনা করেছেন দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রীদের কয়েকজন পরিবারের সদস্য। তাদের অভিযোগ, বোয়িং যথাযথভাবে দায় স্বীকার না করেই ফৌজদারি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। নিহতদের পরিবারের একজন প্রতিনিধি জাভিয়ের ডি লুইস বলেন, “এই পদক্ষেপের মাধ্যমে করপোরেট জবাবদিহির প্রশ্নে একটি বিপজ্জনক বার্তা দেওয়া হয়েছে— যে কোনো কোম্পানি তাদের পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে অবহেলা করলেও আর্থিক সমঝোতার মাধ্যমে পার পেতে পারে।”
বিশ্লেষকদের মতে, বোয়িং-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ খারিজ হওয়া কোম্পানিটির সুনাম পুনর্গঠনে স্বস্তি আনলেও, নিরাপত্তা মান নিয়ে উদ্বেগ পুরোপুরি কাটেনি। মার্কিন বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (এফএএ) ইতিমধ্যে ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলগুলোর সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া ও নকশাগত অনুমোদন পুনর্মূল্যায়নের ঘোষণা দিয়েছে।
বোয়িং বর্তমানে তাদের ভবিষ্যৎ উৎপাদন পরিকল্পনায় ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের নকশা ও প্রযুক্তিগত ত্রুটি সংশোধনে জোর দিচ্ছে। কোম্পানিটি বলেছে, তারা পাইলট প্রশিক্ষণ ও ফ্লাইট সফটওয়্যারের নিরাপত্তা মান বাড়াতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করছে।
এদিকে, নিহতদের পরিবারের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তারা এখনও বেসামরিক আদালতে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত মামলাগুলো চালিয়ে যাবেন। তাদের দাবি, এই ফৌজদারি মামলা খারিজ হওয়ার ফলে ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ থেকে গেছে।
মার্কিন আদালতের এই সিদ্ধান্ত বোয়িং-এর জন্য তাৎক্ষণিক আইনি স্বস্তি আনলেও, কোম্পানিটির করপোরেট দায়িত্ব, জনবিশ্বাস ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা মান নিয়ে বিতর্ক আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


