আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পশ্চিম সিংভূম জেলার একটি সরকারি হাসপাতালে রক্ত নেওয়ার পর পাঁচ শিশু এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমিত রক্ত সঞ্চালনের এই ঘটনা সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসার পর প্রশাসনের তৎপরতায় হাসপাতালের সিভিল সার্জন, এইচআইভি ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্ট টেকনিশিয়ানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে জেলার সদর হাসপাতালে, যেখানে ওই শিশুরা চিকিৎসার জন্য ভর্তি ছিল। হাসপাতালের রক্তব্যাংক থেকে রক্ত নেওয়ার পর তাদের দেহে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয়। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর রাজ্যজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন আক্রান্ত শিশুদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে প্রতিটি পরিবারকে দুই লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। রাজ্য সরকার এ ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংক্রমিত রক্ত সঞ্চালনের ফলেই শিশুরা এইচআইভি পজিটিভ হয়েছে। আক্রান্ত শিশুদের একজনের মা জানিয়েছেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে তিনি মেয়েকে সদর হাসপাতালে রক্ত দেওয়ার জন্য নিয়ে যান। তখন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আচরণে পরিবর্তন দেখে তার সন্দেহ হয়। পরে এক স্বাস্থ্যকর্মী তাকে জানান, ভুলবশত সংক্রমিত রক্ত সঞ্চালনের ফলে শিশুটি এইচআইভি পজিটিভ হয়েছে।
এই ঘটনায় প্রধান প্রশ্ন উঠেছে—এইচআইভি সংক্রমিত রক্ত কীভাবে সরকারি রক্তব্যাংকে পৌঁছালো। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে পশ্চিম সিংভূমে মোট ২৫৯ জন ব্যক্তি রক্তদান করেছেন। এর মধ্যে ৪৪ জনকে পরীক্ষা করে দেখা হয়, এবং চারজন দাতার রক্তে এইচআইভি ভাইরাস পাওয়া গেছে। বাকিদের বিষয়ে তদন্ত চলছে, যাতে অন্য কোনো সংক্রমিত দাতা থাকলে তাকে শনাক্ত করা যায়।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রামচন্দ্র চন্দ্রবংশী মনে করেন, সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে, ঝাড়খণ্ডের বিশেষ স্বাস্থ্য সচিব ডা. নেহা অরোরা জানিয়েছেন, বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে পরীক্ষার পদ্ধতিতে ত্রুটি ছিল।
তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, যদি রক্ত পরীক্ষায় “প্রি-কিট” ব্যবহার করা হয়, তাহলে পরীক্ষার ফলাফল জানতে সময় লাগে এবং ভাইরাস শনাক্তে বিলম্ব ঘটে। অন্যদিকে, “এলিসা” বা “এনএটি” পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত ভাইরাস শনাক্ত করা যায়, কারণ এই পদ্ধতিতে অ্যান্টিজেন সনাক্ত হয়। তাই ভবিষ্যতে সংক্রমণ এড়াতে প্রি-কিট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মী অতুল গেরা বলেন, ঝাড়খণ্ডে পাঁচ হাজারেরও বেশি থ্যালাসেমিয়া রোগী রয়েছে, কিন্তু পুরো রাজ্যে মাত্র একজন হেমাটোলজিস্ট কর্মরত আছেন। তার মতে, এই ধরনের অব্যবস্থাপনা রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থায় মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংক্রমণের শিকার শিশুদের অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং তাদের বিশেষ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। তদন্তের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে দেশের সরকারি রক্তব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
এই ঘটনায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার তদারকি, রক্ত পরীক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ এবং প্রশাসনিক জবাবদিহি নিয়ে ভারতে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।


