আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের বিহারে অনুপ্রবেশের অভিযোগ ঘিরে ক্ষমতাসীন বিজেপি ও এনডিএ জোটের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) প্রধান ও হায়দরাবাদের সংসদ সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তিনি অভিযোগ করেছেন, সরকার মুসলিম জনগোষ্ঠীর উন্নয়নকে উপেক্ষা করে এখন তাদের বিরুদ্ধে অমূলক অভিযোগ তুলছে।
বিহার বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিশনগঞ্জে ওয়াইসি বলেন, “এখানে (বিহারে) কি সোনার খনি পাওয়া গেছে যে মানুষ ভিড় করবে? যদি তেল আবিষ্কার হতো, তাহলে বুঝতাম। কিন্তু বাস্তবে যুবকেরা কাজের সন্ধানে সারা দেশে ঘুরছে।” তিনি আরও যোগ করেন, সীমানচল অঞ্চলের মুসলিমরা দেশভাগের সময় বাংলাদেশে না গিয়ে ভারতকেই তাদের দেশ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
ওয়াইসি বলেন, যদি সত্যিই অনুপ্রবেশ ঘটে থাকে, তবে এর দায়ভার নিতে হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারকে। তার ভাষায়, “মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার আপনারা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আপনাদের, প্রধানমন্ত্রীও নরেন্দ্র মোদী। তাহলে অনুপ্রবেশকারীরা এল কীভাবে? এর মানে আপনারাই ব্যর্থ। বিএসএফ ও সীমা সুরক্ষা বাহিনীও তো আপনারাই নিয়ন্ত্রণ করেন।”
এআইএমআইএম প্রধান দাবি করেন, বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থে মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু করছে। “বিজেপি বলে অনুপ্রবেশ হচ্ছে—তাহলে ১০ জন অনুপ্রবেশকারীর নাম বলুক দেখি। মুসলিম সমাজের জন্য কিছু করা তো দূরের কথা, বরং তাদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে, এখন আবার তারাই দোষারোপের শিকার,” বলেন ওয়াইসি।
২০২০ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ওয়াইসির দল এআইএমআইএম সীমানচল অঞ্চলে পাঁচটি আসনে জয় পেয়ে রাজনৈতিকভাবে আলোচনায় আসে। এই অঞ্চলটি রাজ্যের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত, যেখানে প্রায় ১৭ শতাংশ মুসলিম ভোটার বসবাস করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওই নির্বাচনে এআইএমআইএম-এর উত্থান বিহারের প্রথাগত দলগুলোর ভোটসমীকরণে নতুন প্রভাব ফেলে।
ওয়াইসি অভিযোগ করেন, কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারই সীমানচল অঞ্চলের উন্নয়নে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। “এই অঞ্চলে অবকাঠামো, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান—সব ক্ষেত্রেই উন্নয়নের অভাব রয়েছে। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে বিজেপি ও তার মিত্ররা মানুষের ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে,” বলেন তিনি।
বিহারের বর্তমান নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে অনুপ্রবেশ ইস্যুটি একটি আলোচিত রাজনৈতিক বিতর্কে পরিণত হয়েছে। বিজেপি নেতারা দাবি করছেন, বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীরা সীমান্ত অঞ্চলে প্রবেশ করছে এবং তা স্থানীয় জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট করছে। তবে বিরোধীরা একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ হিসেবে দেখছেন।
অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ভোট অনিয়ম সংক্রান্ত মন্তব্য প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ওয়াইসি বলেন, ভোটার তালিকা তিন দফায় যাচাই করা প্রয়োজন। তার মতে, “ভোটের সুষ্ঠুতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ প্রক্রিয়া অপরিহার্য।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াইসির এই বক্তব্য শুধু বিহারের নির্বাচনী পরিস্থিতিতেই নয়, বরং ভারতের সামগ্রিক রাজনীতিতেও একটি বিতর্কিত আলোচনার জন্ম দিতে পারে। অনুপ্রবেশ, ধর্মীয় পরিচয় ও আঞ্চলিক উন্নয়ন—এই তিনটি ইস্যুকে ঘিরেই আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক সমীকরণ নতুনভাবে গঠিত হতে পারে।


