চীনে আন্তর্জাতিক আমদানিমেলায় বাংলাদেশি পণ্য প্রদর্শন করছে প্রাণ

চীনে আন্তর্জাতিক আমদানিমেলায় বাংলাদেশি পণ্য প্রদর্শন করছে প্রাণ

অর্থনীতি ডেস্ক

চীনের সাংহাইয়ে চলমান ‘চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইমপোর্ট এক্সপো-২০২৫’-এ অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রাণ। গত বুধবার শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজারো প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য, প্রযুক্তি ও সেবা প্রদর্শন করছে।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আমদানিমেলা হিসেবে পরিচিত এ এক্সপোতে এ বছর ১৫৫টি দেশ থেকে চার হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। প্রায় চার লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে অনুষ্ঠিত এই প্রদর্শনীতে বিভিন্ন খাতের কোম্পানিগুলো নতুন উদ্ভাবন, পণ্য এবং শিল্প-সেবা উপস্থাপন করছে। বাংলাদেশের প্রাণ গ্রুপ সেখানে তাদের বিভিন্ন জনপ্রিয় খাদ্যপণ্য প্রদর্শন করছে।

প্রাণের স্টলে জুস, নুডলস, স্ন্যাকস, কনফেকশনারি এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি খাদ্যপণ্যের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করা এবং চীনা আমদানিকারকদের কাছে স্থানীয় পণ্যের পরিচিতি বৃদ্ধি করাই তাদের অংশগ্রহণের মূল লক্ষ্য।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, চীন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বাজার হলেও এটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ। তিনি বলেন, “চীনের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন সক্ষমতা অনেক উন্নত, ফলে প্রতিটি পণ্যে প্রতিযোগিতা প্রবল। তবে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক দিক হলো—বাংলাদেশি পণ্য বর্তমানে চীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। পাশাপাশি চীনে পণ্য পাঠানোর খরচ তুলনামূলকভাবে কম, যা রপ্তানির সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “চীনের ভোক্তাদের খাদ্যাভ্যাস ও রুচি অনুযায়ী পণ্য তৈরি এবং প্যাকেজিং করা গেলে সেখানে বাংলাদেশি খাদ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের বড় সুযোগ রয়েছে।”

কামরুজ্জামান কামাল জানান, চীনা আমদানিকারক ও বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তার মতে, চীনের বড় বড় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে নিয়মিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে সেই সংযোগ জোরদার করা গেলে বাংলাদেশের খাদ্যপণ্যের রপ্তানি বহুমুখীকরণ আরও সহজ হবে।

বাংলাদেশের রপ্তানি খাত বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাণের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণ দেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যশিল্পের জন্য ইতিবাচক সিগন্যাল বহন করে। চীনের বিশাল ভোক্তা বাজারে বাংলাদেশি ব্র্যান্ডগুলোর অবস্থান শক্তিশালী হলে তা সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশ চীনের কাছে প্রায় দুই শ’ কোটি ডলারেরও বেশি পণ্য রপ্তানি করে থাকে, যার মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের অংশ ক্রমেই বাড়ছে। ‘চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইমপোর্ট এক্সপো’তে প্রাণের উপস্থিতি দেশীয় উৎপাদন সক্ষমতা, প্যাকেজিং প্রযুক্তি ও রপ্তানি প্রস্তুতির অগ্রগতি প্রদর্শনের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মেলায় প্রাণের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের খাদ্যপণ্য শিল্পের জন্য নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনা বাজারে স্থায়ী অবস্থান তৈরি করতে হলে মান নিয়ন্ত্রণ, প্যাকেজিং মান উন্নয়ন ও রুচিসম্মত পণ্য উদ্ভাবনের দিকগুলোতে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। তবে চীনে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা এবং সরবরাহ খরচ কম হওয়ায় দেশটির খাদ্যপণ্যের রপ্তানিতে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

অর্থ বাণিজ্য