নিলাইয়ে ব্যাটারি কারখানায় অভিযান: ১৮৪ অবৈধ অভিবাসী আটক

নিলাইয়ে ব্যাটারি কারখানায় অভিযান: ১৮৪ অবৈধ অভিবাসী আটক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মালয়েশিয়ার নেগেরি সেম্বিলান রাজ্যের নিলাই এলাকায় একটি ব্যাটারি কারখানায় অভিযান চালিয়ে ১৮৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। বৃহস্পতিবার ভোরে পরিচালিত এ অভিযানে বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা ধরা পড়েন, যাদের মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকও রয়েছেন।

নেগেরি সেম্বিলান ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিচালক কেনিথ তান আই কিয়াং জানান, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার মোট ১৬৩ জন পুরুষ এবং ২১ জন নারী রয়েছেন। তাদের বয়স ২০ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে। তবে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি রয়েছেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

কেনিথ তান জানান, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে বৈধ পারমিট ছাড়া বিদেশিদের কাজ করার তথ্য পেয়ে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। জনসাধারণের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে ওই কারখানায় বেশ কিছু অননুমোদিত বিদেশি শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। অভিযানের সময় অনেকে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে কারখানার বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করেন। তবে কর্মকর্তারা তল্লাশি চালিয়ে সবাইকে আটক করতে সক্ষম হন।

ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আটক ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নেগেরি সেম্বিলানের লেংগেং ইমিগ্রেশন ডিপোতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাদের বিষয়ে আরও তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আটক শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট, ভিসা বা পারমিট নিয়ে দেশে অবস্থান করছিলেন।

কেনিথ তান আই কিয়াং আরও জানান, আটক অভিবাসীদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার **ইমিগ্রেশন আইন ১৯৫৯/৬৩**, **পাসপোর্ট আইন ১৯৬৬**, এবং **ইমিগ্রেশন রেগুলেশন ১৯৬৩** অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অপরাধের মধ্যে রয়েছে বৈধ ভ্রমণ নথির অনুপস্থিতি, অনুমোদিত সময়সীমা অতিক্রম করে থাকা, এবং শ্রম পারমিটের শর্ত ভঙ্গ।

ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন রাজ্যে পরিচালিত অভিযানে কারখানা, নির্মাণ প্রকল্প, রেস্তোরাঁ ও কৃষিখাত থেকে শতাধিক বিদেশি শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব অভিযানের লক্ষ্য হলো শ্রমবাজারে অননুমোদিত বিদেশিদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা এবং বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা।

অভিযানের পর স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের বৈধ নথিপত্র পাওয়া যাবে, তাদের মুক্তি দেওয়া হতে পারে; আর যাদের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ মিলবে, তাদের আদালতের মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মালয়েশিয়ায় বর্তমানে আনুমানিক ২৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নির্মাণ, উৎপাদন, কৃষি ও সেবা খাতে নিযুক্ত। তবে দেশটিতে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ অননুমোদিত অভিবাসীদের ধরপাকড়ের অভিযান জোরদার করেছে, যা বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমবাজারে প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম প্রধান শ্রমবাজার, যেখানে বিদেশি শ্রমিকরা দেশের শিল্প ও উৎপাদন খাতের উল্লেখযোগ্য অংশে ভূমিকা রাখছেন। তবে বৈধ নথিপত্রের বাইরে কর্মরত শ্রমিকদের উপস্থিতি দেশটির অভ্যন্তরীণ শ্রমনীতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নেগেরি সেম্বিলান ইমিগ্রেশন বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অবৈধভাবে অবস্থানরত শ্রমিকদের বিষয়ে ভবিষ্যতেও একই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং বৈধতার প্রমাণ ছাড়া কোনো বিদেশিকে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে না।

প্রবাস