জাতীয় ডেস্ক
রাজধানীতে পূর্ব ঘোষিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নন-এমপিও শিক্ষকদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করেছে। রোববার (৯ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নন-এমপিও শিক্ষকদের দাবি, তারা দীর্ঘদিন ধরে বিনা বেতনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছেন এবং বেতন-ভাতা না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের এক দফা দাবি—দেশের সব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দ্রুত এমপিওভুক্ত করা।
সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সেলিম মিয়া জানান, সকাল থেকে শিক্ষকরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলেন। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে গেলে পুলিশ বিনা উসকানিতে তাদের ওপর চড়াও হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “আমরা দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে শান্তিপূর্ণভাবে অগ্রসর হচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎই পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে, জলকামান ছোড়ে এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আমাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে আমি নিজেও আহত হয়েছি। অন্তত পঞ্চাশজন শিক্ষক আহত হয়েছেন।”
অধ্যক্ষ সেলিম মিয়া এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এমন হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষক সমাজের প্রতি এ ধরনের আচরণ জাতির জন্য লজ্জাজনক।” তিনি আরও জানান, এমপিওভুক্তির প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।
অন্যদিকে, শাহবাগ থানার পরিদর্শক (পেট্রোল) বুলবুল আহমেদ বলেন, “নন-এমপিও শিক্ষকরা দুপুরের দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে গেলে তাদের নেতারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু শিক্ষক পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। তখন পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “পুলিশের পক্ষ থেকে মাত্র এক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে। তবে লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেনি।”
দীর্ঘ ১৮ দিন ধরে রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন নন-এমপিও শিক্ষকরা। তাদের দাবি, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও শিক্ষক সমাজের ন্যায্য মর্যাদা নিশ্চিত করতে দেশের সব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে হবে। আন্দোলন চলমান থাকায় এলাকাজুড়ে যান চলাচলে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
সরকারি ও প্রশাসনিক সূত্র বলছে, নন-এমপিও শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে দাবিদার শিক্ষক সংগঠন এখনো সন্তোষজনক কোনো অগ্রগতি দেখতে না পাওয়ায় আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় থাকা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকরা শিক্ষা খাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের দাবিগুলো বাস্তবসম্মতভাবে পর্যালোচনা করা হলে শিক্ষা ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা ফিরবে এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষক মহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধানে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।


