সরকারি অচলাবস্থা ও এআই বাবল উদ্বেগে বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে মন্দা

সরকারি অচলাবস্থা ও এআই বাবল উদ্বেগে বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে মন্দা

অর্থনীতি ডেস্ক

দীর্ঘদিন ধরে চলা মার্কিন সরকারের অচলাবস্থা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতে অতিরিক্ত বিনিয়োগজনিত উদ্বেগের কারণে শুক্রবার বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ ও এশিয়ার প্রধান সূচকগুলো দিনের বেশিরভাগ সময় জুড়ে চাপের মুখে ছিল।

শুক্রবার মার্কিন স্টক বাজারের লেনদেন শেষে দেখা যায়, ডাও জোনস ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক সামান্য উর্ধ্বমুখী থাকলেও প্রযুক্তি নির্ভর নাসডাক সূচক নিম্নমুখী অবস্থায় দিন শেষ করে। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর দিনের শুরুতে ব্যাপক চাপের মুখে পড়ে, যদিও সেশনের শেষ দিকে কিছু বড় প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে সামান্য পুনরুদ্ধার ঘটে।

২০২৫ সালের শুরু থেকে এআই ও প্রযুক্তি খাতে ধারাবাহিক বিনিয়োগের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান ইক্যুইটি সূচকগুলো রেকর্ড ছুঁয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এআই বাবল—অর্থাৎ বাস্তব লাভজনকতার চেয়ে বিনিয়োগের অতিরিক্ত উত্থান—নিয়ে বাজারে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ভেন্টুরা ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের বিশ্লেষক টম ক্যাহিল বলেন, “ডেটা সেন্টার ও এআই অবকাঠামোতে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হলেও এর তাৎক্ষণিক লাভজনকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।” তিনি আরও বলেন, “দীর্ঘমেয়াদি সরকারি অচলাবস্থা বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে, যা সামগ্রিক বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।”

মার্কিন শ্রমবাজারেও শীতলতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ক্যাহিলের মতে, “নতুন তথ্য ইঙ্গিত করছে যে নিয়োগের গতি কমছে, যা সরকারি কার্যক্রম বন্ধ ও বাণিজ্য শুল্কের অনিশ্চয়তার সঙ্গে যুক্ত।”

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার এআই বাবল নিয়ে বাজারে ছড়ানো উদ্বেগকে অস্বীকার করেছেন। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “না, আমি এআই পছন্দ করি। এটি অত্যন্ত সহায়ক হবে। আমি মনে করি এটি ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগত দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে, এবং যুক্তরাষ্ট্র এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে।”

সরকারি অচলাবস্থা নিরসনে সিনেট ডেমোক্র্যাটিক নেতা চার্লস শুমার একটি সংশোধিত প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এতে দিনের শেষদিকে বাজারে কিছুটা গতি ফিরলেও রিপাবলিকান সিনেটররা দ্রুত তা প্রত্যাখ্যান করেন। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, প্রস্তাবটি গৃহীত না হওয়ায় অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

বি. রাইলি ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের আর্ট হোগান বলেন, “অচলাবস্থা যত দীর্ঘায়িত হবে, এর অর্থনৈতিক ক্ষতি ততই বাড়বে। বিনিয়োগকারীরা এখন বুঝতে শুরু করেছেন যে এটি কেবল রাজনৈতিক নয়, আর্থিক দিক থেকেও প্রকৃত ক্ষতি করছে।”

মার্কিন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, সরকারের অচলাবস্থার কারণে নভেম্বরে ভোক্তাদের আস্থা অক্টোবরের তুলনায় কমেছে। জরিপ পরিচালক জোয়ান সু বলেন, “এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সরকার আংশিকভাবে বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ এখন অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।”

অন্যদিকে, আউটপ্লেসমেন্ট প্রতিষ্ঠান চ্যালেঞ্জার, গ্রে অ্যান্ড ক্রিসমাস-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরিচ্যুতির হার গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সরকারি তথ্যপ্রকাশে বিঘ্ন ঘটায় বিনিয়োগকারীরা এখন বেসরকারি উৎসের তথ্যের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন।

অচলাবস্থার প্রভাবে ফেডারেল প্রশাসন শুক্রবার শত শত অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিলের নির্দেশ দেয়। এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলাররা বেতন ছাড়াই কাজ করায় ফ্লাইট পরিচালনায় সীমাবদ্ধতা আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া বৈশ্বিক বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চীনের রপ্তানি অক্টোবরে আট মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো হ্রাস পাওয়ায় এশিয়ার শেয়ারবাজারে চাপ তৈরি হয়। ইউরোপে লন্ডনের প্রধান সূচক এফটিএসই ১০০-ও নিম্নমুখী প্রবণতায় দিন শেষ করে। রাইটমুভ এবং ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মালিক আইএজি-এর প্রত্যাশার চেয়ে কম আয় ঘোষণা সূচকটিকে প্রভাবিত করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী সরকারি অচলাবস্থা ও এআই খাতে অতিরিক্ত বিনিয়োগজনিত অস্থিরতা বৈশ্বিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলছে। বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে দ্রুত রাজনৈতিক সমাধান এবং প্রযুক্তি খাতে বাস্তবসম্মত মুনাফা কাঠামো প্রতিষ্ঠা এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

অর্থ বাণিজ্য আন্তর্জাতিক