অর্থনীতি ডেস্ক
দেশের বাজারে পেঁয়াজের লাগামছাড়া দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সীমিত পরিমাণে আমদানির অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বাণিজ্যসচিব ও কৃষি সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে কমিশন এ সুপারিশ জানায়।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কিছু মধ্যস্বত্বভোগী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। কমিশনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই সময় পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দাম ৯০ টাকার মধ্যে থাকার কথা থাকলেও তা বেড়ে ১১৫ টাকার ওপরে পৌঁছেছে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে একই পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ৩০ টাকার মধ্যে রয়েছে।
বিটিটিসি মনে করছে, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পেঁয়াজের দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকায় শুল্ককর হ্রাসের প্রয়োজন নেই। বর্তমানে পণ্যটিতে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রযোজ্য রয়েছে। কমিশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, দ্রুত সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হলে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং মূল্য শিগগিরই স্থিতিশীল হতে পারে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান জানান, “কিছু মধ্যস্বত্বভোগী বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমিত পরিমাণে আমদানির অনুমতি দিলে বাজারে ভারসাম্য ফিরবে এবং ভোক্তারা যৌক্তিক দামে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।”
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পেঁয়াজের দাম বাড়লেও এর সুফল কৃষকরা পাচ্ছেন না; বরং মধ্যস্বত্বভোগীরাই এর সুযোগ নিচ্ছে। কমিশনের মতে, আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হলে এসব মধ্যস্বত্বভোগীর প্রভাব কমবে, প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং বাজারে স্বাভাবিকতা ফিরবে।
বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানির প্রধান উৎস ভারত, যেখান থেকে মোট আমদানির প্রায় ৯৯ শতাংশ আসে। এছাড়া তুরস্ক, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন ও মিশর থেকেও সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়ে থাকে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। তবে সংরক্ষণ সুবিধার সীমাবদ্ধতা, পরিবহন ঘাটতি এবং প্রাকৃতিক ক্ষয়ক্ষতির কারণে এর একটি বড় অংশ বাজারে আসে না। গত অর্থবছরে উৎপাদিত পেঁয়াজের মধ্যে প্রায় ৩৩ লাখ টন বাজারজাত করা সম্ভব হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশীয় উৎপাদন ও সংরক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক তৎপরতা জোরদার করা প্রয়োজন। ট্যারিফ কমিশনের এ সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে সরবরাহ বাড়বে এবং ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজের দামের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
পেঁয়াজ বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভোগ্যপণ্য। প্রতিবছর উৎপাদন ঘাটতি পূরণে সরকারকে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়মিত বাজার নজরদারি ও সরবরাহ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা গেলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অস্থিরতা মোকাবিলা করা সহজ হবে।


