জাতীয় ডেস্ক
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে করা মন্তব্য ভুল এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচারের প্রতি অসম্মানজনক। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রোববার (৯ নভেম্বর) এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, “ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা আমাদের নজরে এসেছে। আমরা মনে করি, এটি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য সহায়ক নয়। একইসঙ্গে এ ধরনের মন্তব্য কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও সৌজন্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।”
মুখপাত্র আরও জানান, কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থাকা কর্মকর্তাদের মন্তব্য ও আচরণে সতর্ক থাকা জরুরি। দুই দেশের সম্পর্কের সুস্থ বিনিময় বজায় রাখতে পারস্পরিক সম্মান এবং শিষ্টাচার পালন অপরিহার্য।
এর আগে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে তার বক্তব্যে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব চাই না, তবে ইউনূসকে তার বক্তব্যে সতর্ক থাকতে হবে।”
রাজনাথ সিং আরও বলেন, “ভারত বাংলাদেশ সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব চায় না।” তবে এই মন্তব্যের ধরণ এবং প্রকাশের পদ্ধতি বাংলাদেশি কূটনৈতিক সূত্রে সমালোচিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্কের শিষ্টাচারের মধ্যে একজন অন্য দেশের সরকারি উপদেষ্টাকে সরাসরি লক্ষ্য করে সতর্কবার্তা প্রদান করা অপ্রচলিত এবং তা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নে ভূমিকা রাখেন। তার উপর প্রতিক্রিয়া ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়, বরং পেশাগত দায়িত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে আরো জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে স্থিতিশীল ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের মন্তব্য অনিচ্ছাকৃত উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে, যা কূটনৈতিক যোগাযোগ এবং সীমান্ত পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে পারস্পরিক বাণিজ্য, সীমান্ত নিরাপত্তা, পানি সম্পদ এবং আঞ্চলিক নীতি সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এমন মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের প্রয়োগের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ প্রতিনিয়তই আন্তর্জাতিক মঞ্চে কূটনৈতিক শিষ্টাচার, পারস্পরিক সম্মান এবং সংলাপের মাধ্যমে সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই নীতি অব্যাহত রাখা হবে।
এই পরিস্থিতিতে, কূটনৈতিক মহল মনে করছে, উভয় পক্ষের জন্য কার্যকর সমাধান হবে সংলাপ এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে মতানৈক্য দূর করা। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে স্থিতিশীল সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক শান্তি রক্ষার জন্য শিষ্টাচার ও পারস্পরিক সম্মান মেনে চলা অপরিহার্য।
সাম্প্রতিক এই ঘটনা বাংলাদেশের কূটনৈতিক নীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ন পর্যবেক্ষণ হিসেবে ধরা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।


