আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুদ্ধবিরতি চুক্তি উপেক্ষা করে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রোববার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চালানো এ হামলায় অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, বিনত জবাইল অঞ্চলের আল-সাওয়ানে ও খিরবেত সেলেম এলাকার মাঝামাঝি স্থানে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় একজন নিহত হন। লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি (এনএনএ) জানায়, ওই এলাকায় একটি পিকআপ ট্রাক লক্ষ্য করে ইসরায়েলি ড্রোন তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এতে ঘটনাস্থলেই ট্রাকচালক নিহত হন এবং আশপাশের স্থাপনায় ক্ষতি হয়।
একই দিনে নাবাতিয়ের ইকলিম আল-তুফাহ অঞ্চলে হুমাইন আল-ফাওকা–হামিলা সড়কে এক বেসামরিক গাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটে। এনএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানে ইসরায়েলি ড্রোনের হামলায় আরও একজন নিহত হয়েছেন।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি ড্রোনের তৎপরতা বেড়ে গেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। টায়ার জেলা, নাবাতিয়ে প্রদেশ, ইকলিম আল-তুফাহ ও বিনত জবাইল এলাকাজুড়ে ড্রোনগুলো নিচু উচ্চতায় টহল দিচ্ছে এবং মাঝে মাঝে লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে।
এ ঘটনার পর এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ইসরায়েলের এ হামলা সীমান্ত পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
দক্ষিণ লেবাননে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েল ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘর্ষ তীব্রতর হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলার ঘটনা ঘটছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাত শুরু হলেও ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তা পূর্ণাঙ্গ সামরিক রূপ নেয়।
লেবাননের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১৭ হাজার। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও sporadic বা ছিটেফোঁটা হামলা অব্যাহত থাকায় সীমান্তবর্তী জনপদগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধে কার্যকর ভূমিকা নিতে। তারা বলেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ এবং এর ফলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী (ইউএনআইএফআইএল) পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে। সংস্থাটির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক হামলাগুলো যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং সব পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে আবারও সহিংসতা বৃদ্ধি পেতে পারে, যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।


