জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোটে চার-পাঁচটি প্রশ্ন রাখার পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোটে চার-পাঁচটি প্রশ্ন রাখার পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের

জাতীয় ডেস্ক

অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই জাতীয় সনদ সংক্রান্ত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের প্রস্তুতি করছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, একাধিক প্রশ্নের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে সনদে অন্তর্ভুক্ত ৪৮টি সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবের সমর্থন নেওয়া হবে। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য দলের মধ্যে মতবিরোধ থাকা মৌলিক প্রস্তাবগুলো আলাদা প্রশ্ন হিসেবে গণভোটে উপস্থাপন করার চিন্তা করা হচ্ছে।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো নিয়ে গণভোটে চার থেকে পাঁচটি প্রশ্ন রাখা হতে পারে। যেখানে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের একমত থাকা ৩০টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে একটি প্যাকেজ প্রশ্ন রাখা হবে। এর বাইরে ১৮টি প্রস্তাবে বড় দলগুলোর মধ্যে বিশেষত বিএনপির মতবিরোধ রয়েছে, যা নিয়ে তিন-চারটি পৃথক প্রশ্ন করার প্রস্তাব তৈরি হচ্ছে।

মতবিরোধী প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন সংক্রান্ত পিআর (প্রতিশত-অনুপাতে) পদ্ধতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন, ন্যায়পাল, সরকারি কর্মকমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থায় নিয়োগ পদ্ধতি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়। সরকারের লক্ষ্য এসব বিষয় নিয়ে পৃথক প্রশ্ন রেখে ভোটারদের সমর্থন বা আপত্তি জানা।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, প্রথমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ জারি করা হবে। এরপর ওই আদেশ ও ৪৮টি সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাব নিয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। হ্যাঁ ভোটের জয়ী হলে আগামী সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো কার্যকর করবে। বিকল্পভাবে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংসদ সংবিধান সংস্কারে ব্যর্থ হলে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, “সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে পরিষ্কারভাবে জানা যাবে। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে, সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে।”

আইন উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘ আলোচনার পর প্রস্তাবগুলো তৈরি করেছে। যদিও সংস্কার বাস্তবায়নে আমলাতন্ত্রের বিরোধিতার মুখে পড়া সম্ভব, সরকার জনগণের স্বার্থ এবং সব দলের প্রত্যাশার প্রতি সমন্বয় ঘটিয়ে কাজ করবে। তিনি পুলিশ সংস্কার কমিশন আইন খসড়ার উদাহরণ দিয়ে জানান, প্রতিটি প্রস্তাব কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

গণভোটের সময় নির্ধারণ, প্রশ্নের সংখ্যা এবং বিষয়বস্তুর চূড়ান্ত তালিকা সরকারের হাতে থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সরকারের আশা, সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী গণভোটের ফলাফল মেনে নেবে।

জাতীয়