ঢাকা, ১২ নভেম্বর ২০২৫: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গত কয়েকদিনে রাজধানীতে ঘটে যাওয়া আগুন সন্ত্রাসের ঘটনা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে পারে। তিনি দাবি করেন, পলাতক স্বৈরাচারের সহযোগীরা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে, এবং তাদের বিষয়ে রাজনৈতিক শক্তিকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
আজ বুধবার (১২ নভেম্বর) ঢাকার বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব মন্তব্য করেন। সভার সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ সময় তারেক রহমান ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক শক্তির ঐক্যের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “এখনই সবার কাছে স্পষ্ট—ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে কিছু দল নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ফ্যাসিবাদের ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই পতিত, পরাজিত, পলাতক স্বৈরাচারের পক্ষ থেকে ঐ একই কৌশল পুনরায় অবলম্বন করা হচ্ছে।”
তবে তিনি কোনো দলের নাম উল্লেখ না করলেও, তার বক্তব্যের মাধ্যমে ইঙ্গিত দেন যে, কিছু রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে ফ্যাসিবাদী শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করছে।
তরুণ নেতা তারেক রহমান বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেক দল জাতীয় নির্বাচনকে এক ধরনের শর্তসাপেক্ষে আটকে রাখতে চাইছে। তাদের লক্ষ্য শুধু নির্বাচন নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে পতিত শক্তির পুনর্বাসনের পথ সুগম করা।”
বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী নেতাদের মধ্যে বিরোধপূর্ণ অবস্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গণভোটের দাবিতে আন্দোলনের আড়ালে কৌশলে রাজনৈতিকভাবে পতিত শক্তিকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এটি দেশের গণতান্ত্রিক জনগণের জন্য একটি বড় বিপদ হতে পারে।”
আন্তর্বর্তী সরকারের গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, “স্বল্প মেয়াদে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণ সার্বিক সফলতা আশা করে না। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারি মাসের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ করেছে। সরকারকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—তারা রাজনৈতিক দলের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করবে, নাকি জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনী প্রক্রিয়া অগ্রাধিকার দেবে।”
এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দও সভায় উপস্থিত ছিলেন, যেমন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামী নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, এবং গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ।
তারেক রহমানের বক্তৃতা থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন, তিনি বিএনপির চলমান রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলনকে আরও তীব্র করতে চান।


