ভেনেজুয়েলা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার, মার্কিন আগ্রাসনের মোকাবিলার প্রস্তুতি

ভেনেজুয়েলা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার, মার্কিন আগ্রাসনের মোকাবিলার প্রস্তুতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভেনেজুয়েলা সরকার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সম্ভাব্য কোনো সামরিক হুমকির মোকাবিলায় দেশের সশস্ত্র বাহিনী সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রয়েছে। মঙ্গলবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো এক বিবৃতিতে বলেন, এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে স্থল, আকাশ, নৌ, নদী এবং ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেমে ব্যাপক মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ, মিলিশিয়া এবং নাগরিক ইউনিটগুলির অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা হচ্ছে।

এই ঘোষণা এমন সময়ে এসেছে যখন ক্যারিবীয় অঞ্চলে একটি মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সরকারের সম্ভাব্য পতনের উদ্দেশ্যে সামরিক পদক্ষেপের জল্পনা উস্কে দিয়েছে। জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

মঙ্গলবার পেন্টাগন নিশ্চিত করেছে, বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরী জেরাল্ড আর ফোর্ড ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ ক্যারিবিয়ান সাগরে পৌঁছেছে। এ দলের সঙ্গে কমপক্ষে চার হাজার নাবিক এবং ‘কৌশলগত বিমান’ মোতায়েন করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রশিক্ষণ মহড়ার জন্য পুয়ের্তো রিকো, এল সালভাদর, পানামা ও ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর মতো ক্যারিবীয় অঞ্চলের নিকটবর্তী এলাকায় সৈন্য মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য অবৈধ মাদকপাচার প্রতিরোধ এবং দেশ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক প্রস্তুতি নিশ্চিত করা। তবে তারা মাদুরোকে ভেনেজুয়েলার গ্যাং ‘ট্রেন ডি আরাগুয়া’ সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন, যাদের যুক্তরাষ্ট্রে সীমিত উপস্থিতি রয়েছে।

মাদুরো ও তার সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রমকে ‘সাম্রাজ্যবাদী হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্যের সামনে মাদুরো সরকারের এই প্রস্তুতি মূলত প্রতিরক্ষা চিত্র প্রদর্শনের চেষ্টা। সরাসরি শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে দেশটির কর্মী ও আধুনিক সরঞ্জামের অভাব একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

দেশের অভ্যন্তরেও মাদুরো চাপের মুখে রয়েছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর দেশব্যাপী অসন্তোষ এবং ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে তাকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তার সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগও উঠেছে।

গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের ধারাবাহিকতায় ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কমপক্ষে ১৯টি বিমান হামলা চালিয়েছে, যা মূলত ক্যারিবীয় ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মাদক পাচারকারী জাহাজকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়েছে। এসব হামলায় প্রায় ৭৫ জন নিহত হয়েছেন।

ভেনেজুয়েলা-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা লক্ষ্য করছেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং সামরিক অবস্থান পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ প্রভাব এবং অঞ্চলটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

আন্তর্জাতিক