আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকরভাবে সম্পাদিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করার পর ক্ষমা চেয়েছে যুক্তরাজ্যের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম বিবিসি। প্রামাণ্যচিত্রে ট্রাম্পের বক্তৃতার এমন একটি অংশ সম্পাদনা করা হয়, যাতে মনে হচ্ছিল তিনি সহিংসতার প্রতি উসকানি দিচ্ছেন। এতে প্রেসিডেন্ট আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবর অনুযায়ী, বিবিসি একটি চিঠি পাঠিয়ে ট্রাম্পকে জানায়, তাদের প্রামাণ্যচিত্রে ট্রাম্পের ভাষণ যেভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে, তাতে তারা দুঃখিত। সংস্থাটি আরও জানায়, “এই ভিডিও ক্লিপটি যেভাবে সাজানো হয়েছিল, তা আমাদের পক্ষ থেকে ভুল ছিল। তবে, আমরা মনে করি না যে এর কারণে মানহানির অভিযোগ তোলার মতো কিছু হয়েছে।”
প্রামাণ্যচিত্রটি ছিল ‘ট্রাম্প: আ সেকেন্ড চ্যান্স?’ নামে একটি বিশেষ প্রতিবেদন, যা একটি তৃতীয় পক্ষের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা নির্মিত। এতে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ট্রাম্পের ভাষণ থেকে তিনটি অংশ কেটে একত্র করা হয়, যাদের মধ্যে এক ঘণ্টার ব্যবধান ছিল। এইভাবে সম্পাদিত অংশে ট্রাম্পকে তার সমর্থকদের উত্তেজিত করে “ফাইট লাইক হেল” বলছেন এমন দৃশ্য তৈরি করা হয়, যা দেখে মনে হচ্ছিল তিনি সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন।
তবে, সেই ভাষণে ট্রাম্প তার সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন, কিন্তু সে অংশটি প্রামাণ্যচিত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে, বিশেষ করে ওই সময় ট্রাম্পের সমর্থকরা ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়েছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল অনুমোদন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা, যেখান ট্রাম্প হেরে গিয়েছিলেন।
এ ঘটনার পর ট্রাম্পের আইনজীবীরা বিবিসিকে নোটিশ পাঠিয়ে প্রামাণ্যচিত্রটি প্রত্যাহার, প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। তারা বলেছিলেন, যদি বিবিসি তাদের দাবিতে সাড়া না দেয়, তবে ১ বিলিয়ন ডলারের মামলা করা হবে। তাদের অভিযোগ ছিল, প্রামাণ্যচিত্রে ট্রাম্পকে নিয়ে “মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর” তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
এদিকে, বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি এবং বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টার্নেস পদত্যাগ করেছেন এই ঘটনায়। টার্নেস তার পদত্যাগে বলেন, “বিবিসি নিউজ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের দায়িত্ব আমার কাঁধে ছিল।” ডেভি তার বিদায়ী বক্তব্যে বলেন, “ভুল হয়েছে ঠিকই, তবে বিবিসি এখনও সাংবাদিকতার ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড’ হিসেবে বিবেচিত।”
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের পক্ষে এই মামলায় জয়লাভ করা সহজ হবে না। যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইনব্যবস্থায় প্রমাণ করতে হবে যে, প্রামাণ্যচিত্রের কারণে ট্রাম্পের কোন ক্ষতি হয়েছে। কারণ তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন, ফলে তার স্বার্থে কোনো ক্ষতি হয়নি বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া, যুক্তরাজ্যে মামলা করার সময়সীমা এক বছর আগেই পেরিয়ে গেছে, আর মানহানির মামলায় ক্ষতিপূরণ সাধারণত এক লাখ পাউন্ডের বেশি হয় না। তাছাড়া, প্রামাণ্যচিত্রটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রচারিত হয়নি, তাই মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে ট্রাম্প সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা জন্মানোর বিষয়টি প্রমাণ করাও কঠিন।
তবে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ট্রাম্প এই ভুলটিকে কাজে লাগিয়ে বিবিসির বিরুদ্ধে নতুন করে সমঝোতা চাইতে পারেন, সম্ভবত তার পছন্দের কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জন্য। এর আগে, ট্রাম্প এবিসি ও সিবিএস টিভি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে মামলা করে বড় অংকের ক্ষতিপূরণ আদায় করেছিলেন। এবিসি ১৫ মিলিয়ন ডলার এবং সিবিএসের মালিক প্যারামাউন্ট ১৬ মিলিয়ন ডলার দিয়ে ওই মামলা মিটিয়ে নিয়েছিল।


