মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট মাঠে নামার প্রস্তুতি

মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট মাঠে নামার প্রস্তুতি

খেলাধুলা ডেস্ক

বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে নতুন এক মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। দেশের হয়ে সর্বাধিক টেস্ট খেলার রেকর্ড আগেই নিজের করে নেওয়া এই উইকেটকিপার-ব্যাটার এবার প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে শততম টেস্ট ম্যাচে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী ১৯ নভেম্বর মিরপুরের শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়রল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেই অনুষ্ঠিত হবে তাঁর ঐতিহাসিক শততম ম্যাচ।

সিলেটে আয়রল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইনিংস ব্যবধানে জয় পাওয়া ম্যাচটি ছিল মুশফিকের ৯৯তম টেস্ট। দীর্ঘ ১৯ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে নিয়মিতভাবে টেস্ট দলে অবদান রাখার ধারাবাহিকতাই তাঁকে ইতিহাসগড়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। দেশের ক্রিকেটে টেস্ট ফরম্যাটের প্রতি তাঁর অনুগত থাকা, ধৈর্যশীল ব্যাটিং মনোভাব ও কঠিন সময়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা—সব মিলিয়ে এই মাইলফলককে জাতীয় দলের ক্রিকেটার ও বোর্ডের কাছে বিশেষ করে তুলেছে।

মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্টকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) দিনটিকে স্মরণীয় করতে বিশেষ আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে। মাঠে উপস্থিত থাকবেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। জানা গেছে, ম্যাচের আগে বিসিবির পক্ষ থেকে তাঁকে একটি সম্মাননা ক্রেস্ট ও জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের স্বাক্ষরিত ব্যাট প্রদান করা হবে। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবার কোনো খেলোয়াড় এই মাইলফলক ছুঁতে যাওয়ায় স্টেডিয়ামজুড়ে বিশেষ পরিবেশ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মাইলফলক স্পর্শের এই সময়টিতে ক্রিকেট মহলে উঠেছে একটি প্রশ্ন—শততম টেস্টের পর কি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন মুশফিক? বিশেষত সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে তাঁর অবসরের সিদ্ধান্তের পর এমন জল্পনা আরও জোরালো হয়েছে। তবে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আপাতত অবসর নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই তাঁর। তিনি শুধুমাত্র টেস্ট ক্রিকেটেই মনোনিবেশ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন এবং লাল বলের ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি দলেও ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে।

সিলেট টেস্ট জয়ের পর বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত মুশফিকের শততম টেস্ট প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এটি দেশের ক্রিকেটে বড় অর্জন এবং দল এই ম্যাচটিকে বিশেষভাবে উদযাপন করতে চায়। শান্ত বলেন, “এরকম একটি অর্জন আমাদের ক্রিকেটে আগে কখনো হয়নি। তাই আমরা চাই দিনটি সম্মানের সঙ্গে উদযাপিত হোক, এবং অধিনায়ক হিসেবে আমি সেই দায়িত্বই পালন করব।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের উপস্থিতি তরুণদের শেখার সুযোগ তৈরি করে এবং দলের স্থিতিশীলতা বাড়ায়।

মুশফিকের অবসরসংক্রান্ত আলোচনার প্রসঙ্গে অধিনায়ক শান্ত আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে শততম টেস্টের পরও মুশফিক খেলোয়াড় হিসেবে দলে অবদান রাখতে থাকবেন। শান্ত বলেন, “আমি আশা করব মুশফিক ভাই শততম টেস্টের পরও খেলা চালিয়ে যাবেন। এমন অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা আমাদের টেস্ট দলে প্রয়োজন।”

বাংলাদেশ ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিমের অবদান উল্লেখযোগ্য। ২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করা এই ক্রিকেটার টেস্ট দলে নির্ভরযোগ্যতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। ব্যাটিং অর্ডারে মাঝারি পর্যায়ে দীর্ঘ ইনিংস খেলার জন্য তাঁর খ্যাতি রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় চাপের মুখে দলকে টেনে তোলায় তিনি নেতৃত্বগুণও প্রদর্শন করেছেন। তাঁর ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত একাধিক সেঞ্চুরি, গুরুত্বপূর্ণ পারফরম্যান্স ও ম্যাচ জেতানো ইনিংস রয়েছে, যা দেশের টেস্ট ক্রিকেটে মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত।

আগামী ১৯ নভেম্বরের ম্যাচটি শুধু মুশফিকের ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং দেশের ক্রিকেট ইতিহাসেও এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে টেস্ট ফরম্যাটকে আরও গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন মুশফিকের মতো একজন সিনিয়র ক্রিকেটারের শততম টেস্ট দলকে আরও অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁর অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ তরুণ ক্রিকেটারদের প্রস্তুতিতে এবং মাঠে সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মিরপুরে আয়রল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট তাই শুধু দু’দলের লড়াই নয়; বরং বাংলাদেশের একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের দীর্ঘ যাত্রার সম্মাননা, যা দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে বিশেষ মুহূর্ত হিসেবে স্থান করে নেবে।

খেলাধূলা