আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের হেবরন শহরের পুরোনো এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী মুসলিমদের জন্য ইব্রাহিমি মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে এবং একই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের ওপর কারফিউ জারি করেছে। শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাতে বার্তাসংস্থা আনাদোলু এ খবর প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, ইসরায়েলি বাহিনী এই পদক্ষেপ নিয়েছে অবৈধ ইসরায়েলি বসতকারীদের ইহুদি ধর্মীয় উৎসব পালনের সুযোগ দিতে।
স্থানীয় কর্মীরা জানিয়েছেন, পশ্চিম তীরের দক্ষিণাঞ্চলীয় হেবরন শহরে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শহরের পুরোনো এলাকাটি এখনো ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে কারফিউ জারি করে এবং প্রবেশের সামরিক চেকপয়েন্টগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। এতে বহু ফিলিস্তিনি বাসিন্দা নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারেননি এবং রাত কাটাতে বাধ্য হয়েছেন হেবরনের অন্যান্য এলাকায়।
হেবরন ডিফেন্স কমিটির সদস্য আরেফ জাবের আনাদোলুকে জানান, শুক্রবার সকাল থেকেই পুরোনো শহরে এই কারফিউ কার্যকর করা হয়েছে। তিনি জানান, ইসরায়েলি বাহিনী সামরিক নিরাপত্তার মধ্যে শত শত অবৈধ বসতকারীকে হেবরনের পুরোনো শহরে ঢুকতে এবং রাস্তায় শোভাযাত্রা করার সুযোগ দেয়। এই শোভাযাত্রা “উসকানিমূলক” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
জাবের আরও জানান, এই পদক্ষেপ মূলত ইব্রাহিমি মসজিদের বাকি অংশ সম্পূর্ণ দখলে নেওয়ার এবং তা সিনাগগে রূপান্তর করার ইসরায়েলি প্রচেষ্টার অংশ। তিনি বলেন, ইসরায়েলি বাহিনীর এই পদক্ষেপ মসজিদের মুসলিমদের অংশের উপর আরও নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার একটি প্রয়াস।
ফিলিস্তিনি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রতিদিন ইব্রাহিমি মসজিদের সুক গেট বন্ধ রাখছে, এবং মসজিদের পূর্ব দিকের প্রধান গেটও বন্ধ করা হয়েছে। এমনকি মসজিদের জানালাগুলোও ঢেকে দেওয়া হয়েছে, ফলে মসজিদে প্রবেশের ক্ষেত্রে মুসলিমদের জন্য বাধা তৈরি হয়েছে।
ইব্রাহিমি মসজিদ হেবরনের পুরোনো শহরে অবস্থিত এবং এটি বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখানে প্রায় ৪০০ অবৈধ ইসরায়েলি বসতকারী বসবাস করে এবং তাদের নিরাপত্তা দিতে প্রায় ১৫০০ ইসরায়েলি সেনা উপস্থিত থাকে।
এ মসজিদটি ১৯৯৪ সালে এক ইসরায়েলি বসতকারীর হাতে ২৯ জন ফিলিস্তিনি মুসল্লির নিহত হওয়ার পর থেকে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। মসজিদের ৬৩ শতাংশ অংশ ইহুদিদের উপাসনার জন্য বরাদ্দ, এবং ৩৭ শতাংশ অংশ মুসলিমদের জন্য। ইহুদিদের অংশে মসজিদের আজান দেওয়ার ঘরটি রয়েছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের একতরফা ব্যবস্থাপনায়, বছরে ১০ দিন ইহুদি ধর্মীয় উৎসবের সময়ে মসজিদটি পুরোপুরি মুসলিমদের জন্য বন্ধ থাকে এবং ইসলামি উৎসবের সময়ে ১০ দিন ইহুদিদের জন্য মসজিদটি বন্ধ থাকে। তবে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর মুসলিমদের জন্য নির্ধারিত পূর্ণ প্রবেশাধিকার আর বহাল রাখা হয়নি।
এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়েছে, এবং এটি পশ্চিম তীরের মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।


