যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযান বা নীতিগত পদক্ষেপের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তবে তিনি প্রকাশ করেননি, ঠিক কোন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শুক্রবার এয়ার ফোর্স ওয়ানের ভেতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “আমি আপনাদের বলতে পারব না, কিন্তু হ্যাঁ, আমি মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। ভেনেজুয়েলার সঙ্গে মাদকদ্রব্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।”

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মাদকবিরোধী অভিযানে ভালো অগ্রগতি দেখা গেছে, তবে প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকো এবং কলম্বিয়ার পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগের বিষয়। তিনি বলেন, “আমাদের মেক্সিকোতে সমস্যা আছে, আমাদের কলম্বিয়াতে সমস্যা আছে। তবে আমরা খুব ভালো করছি। আমাদের দেশে মাদকের প্রবাহ অনেকটাই কমে এসেছে।”

গত দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী দক্ষিণ আমেরিকা থেকে দেশটিতে মাদকদ্রব্য পরিবহণ ঠেকাতে ন্যূনতম ২১টি নৌযানে হামলা চালিয়েছে। তবে এসব নৌযান আসলেই মাদক পরিবহণে জড়িত ছিল কি না, তা প্রমাণ করতে পারেনি। এসব অভিযানে অন্তত ৮০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এই পরিস্থিতিতে ভেনেজুয়েলার সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেনাবাহিনী ও অসামরিক মিলিশিয়াদের মোতায়েন বৃদ্ধি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ‘নার্কো-টেররিস্টদের’ দমন করতে নতুন সামরিক মিশন ‘অপারেশন সাদার্ন স্পিয়ার’ শুরু করছে। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন এবং প্রতিরক্ষা দপ্তর তা বাস্তবায়ন করছে।

সিএনএনের খবরে বলা হয়, এই সপ্তাহে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা হোয়াইট হাউসে বৈঠক করে ট্রাম্পকে ভেনেজুয়েলায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের বিষয়ে ব্রিফ করেছেন। বৈঠকে স্থলভাগে হামলার বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র অন্তত এক ডজন যুদ্ধজাহাজ এবং প্রায় ১৫,০০০ সৈন্য ভেনেজুয়েলার অঞ্চলে মোতায়েন করেছে, যা ‘অপারেশন সাদার্ন স্পিয়ার’-এর অংশ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভেনেজুয়েলাকে কেন্দ্র করে এই দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার সূচনা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও নীতিগত পদক্ষেপের ফলাফল শুধুমাত্র মধ্যদূরত্বের দেশগুলির নিরাপত্তা পরিস্থিতিতেই নয়, বরং সমগ্র দক্ষিণ আমেরিকায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

ভেনেজুয়েলার জন্য সম্ভাব্য এই পদক্ষেপের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং মাদকপথ নিয়ন্ত্রণে সংযোজিত যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণে। সামরিক মোতায়েন ও নতুন অভিযান দেশটিতে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি স্থলভাগে অভিযান চালানো হয়, তবে স্থানীয় মিলিশিয়া ও সরকারী বাহিনীর প্রতিক্রিয়া যুদ্ধের মাত্রা বাড়াতে পারে।

এছাড়া, দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষত মেক্সিকো ও কলম্বিয়ায় মাদকদ্রব্য পাচার রোধে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ কার্যকর হলে, তা স্থানীয় অর্থনীতি ও সামাজিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি প্রভাবিত করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক প্রস্তুতি ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহগুলোতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পদক্ষেপের বিস্তারিত প্রকাশিত হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত প্রস্তুতি নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মোতায়েন এবং সম্ভাব্য অভিযান দক্ষিণ আমেরিকার রাজনৈতিক মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রাখবে।

আন্তর্জাতিক