রামমোহন রায়কে ব্রিটিশ এজেন্ট দাবি, তীব্র বিতর্কে বিজেপি নেতা পারমার

রামমোহন রায়কে ব্রিটিশ এজেন্ট দাবি, তীব্র বিতর্কে বিজেপি নেতা পারমার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মধ্যপ্রদেশের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা ইন্দার সিং পারমার সম্প্রতি ঊনবিংশ শতাব্দীর সমাজসংস্কারক রাজা রামমোহন রায়কে ব্রিটিশ সরকারের ‘এজেন্ট’ দাবি করে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। পারমারের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তা নিন্দা জানিয়েছে।

আগার মালওয়া জেলায় বিরসা মুন্ডা জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পারমার বলেন, রামমোহন রায় সমাজকে জাতপাতের ভিত্তিতে বিভাজিত করতে ব্রিটিশদের ‘এজেন্ট’ হিসেবে কাজ করেছিলেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, সেই সময় বাংলায় ইংরেজি শিক্ষার আড়ালে ধর্মান্তরণের একটি বিপজ্জনক চক্র চলছিল এবং ব্রিটিশরা অনেক ভারতীয় সংস্কারককে ‘দাসত্বে আবদ্ধ’ করেছিল। পারমারের দাবি, বিরসা মুন্ডা সেই চক্র ভেঙে আদিবাসী সমাজ ও তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষা করেছিলেন।

পারমারের বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্তা বলেন, এই মন্তব্য ‘লজ্জাজনক’ এবং প্রশ্ন তোলেন, সতীদাহ প্রথা বিলুপ্তিকে কি ‘ব্রিটিশ দালালি’ বলা হবে কি না। তিনি আরও বলেন, যারা নিজেদেরই ব্রিটিশের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন, তারা আজ এই ধরনের অভিযোগ করছেন।

ইন্দার সিং পারমারের বিতর্কিত বক্তব্যের ইতিহাস নতুন নয়। এর আগে তিনি দাবি করেছিলেন, ভারতকে ভাস্কো দা গামা আবিষ্কার করেননি, বরং ‘চন্দন’ নামে এক ভারতীয় বণিক করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সরকারিভাবে ইতিহাস বিকৃতভাবে পাঠানো হয়েছে।

পারমারের মন্ত্রণালয় সম্প্রতি আরও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যখন সরকার ও বেসরকারি কলেজগুলোকে নির্দিষ্ট ৮৮টি বই লাইব্রেরিতে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ পাঠানো হয়। এসব বইয়ের একটি বড় অংশই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সঙ্গে যুক্ত লেখকদের রচনা, যার মধ্যে রয়েছে আরএসএসের সাবেক শীর্ষ নেতা সুরেশ সোনির তিনটি বই।

পারমার স্কুলশিক্ষামন্ত্রী থাকার সময়ও দেশের ইতিহাসের ‘বিকৃতি’ নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন। তার দাবি, দেশে শিক্ষিতরা ইতিহাসের প্রকৃত চিত্র জানেন না এবং বিদেশি অভিযাত্রীদের ‘আবিষ্কারের নায়ক’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে ও পরে ব্রিটিশ এজেন্টরা ভারতের ইতিহাস নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পারমারের এই মন্তব্য মধ্যপ্রদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিতর্ককে আরও তীব্র করার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিহাস সংক্রান্ত এই ধরনের বিবাদ শিক্ষাব্যবস্থা ও জনসাধারণের মধ্যে তথ্যের বিতরণ ও গ্রহণের পদ্ধতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ