আইন আদালত ডেস্ক
আগামীকাল, সোমবার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, প্ররোচনা, সহায়তা এবং ষড়যন্ত্রের মত গুরুতর অভিযোগ। রায়ের পর, দণ্ডিত ব্যক্তি জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ যেকোনো নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা হবেন, এবং তাদের নাম ভোটার তালিকায় থাকবে না।
গত ১৩ নভেম্বর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন। এই মামলার শুনানি ২৩ অক্টোবর শেষ হওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য প্রস্তুতি নেয়। বিচারকদের মধ্যে আরও ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে, মামলাটি এখন রায় ঘোষণার জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেন, “দীর্ঘ পরিক্রমা শেষে, আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছি, আশা করছি আদালত সুবিচার করবেন এবং এই রায় বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের সমাপ্তি ঘটাবে।”
রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন, যিনি শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন, তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, তার মক্কেলরা খালাস পাবেন। তিনি প্রসিকিউশনের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। এরপর ট্রাইব্যুনালটি ২৫ মে থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটটি মামলা দাখিল করে, যার মধ্যে জুলাই মাসের অভ্যুত্থান সংক্রান্ত এই মামলা অন্যতম। এই মামলাটি এখন পর্যন্ত বিচারের পর্যায়ে পৌঁছেছে, এবং এটি ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় মামলা হিসেবে বিচারাধীন রয়েছে।
রায়ের দিন নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যাপক সতর্কতা
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার দিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী একে ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগের নাশকতামূলক কার্যক্রম প্রতিহত করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর রায় ঘোষণার দিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তৎপর থাকবে। পাশাপাশি, ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট জোরদার করা হবে, এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে।
ঢাকা শহরের আশপাশের এলাকাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত শুক্রবার ১২ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, পুলিশ শহরের বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল প্যাট্রলিং ও ফুট প্যাট্রলিং বাড়াবে, এবং যেকোনো অশান্তি বা সহিংসতার প্রতিকার করতে অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থানে থাকবে।
রায় ঘোষণার আগের দিন ১৩ নভেম্বর লকডাউন কর্মসূচির সময় ককটেল হামলা এবং আগুন সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ এবং আইনজীবী আশা প্রকাশ করেছেন, এই মামলার রায় বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে এবং ভবিষ্যতে এর মতো অপরাধের প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।


