আইন আদালত ডেস্ক
ঢাকা: সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে, যেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে। নিরাপত্তার কারণে ট্রাইব্যুনালের আশপাশে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ট্রাইব্যুনালের মূল ভবনের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের চারপাশে তৎপর রয়েছেন। মাজার গেটের সামনে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিও দৃশ্যমান। নিরাপত্তা বাহিনীর এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা বা বিশৃঙ্খলা এড়ানো।
এদিন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার এবং অন্যান্য সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী রায় ঘোষণা করবেন। গত ১৩ নভেম্বর এই মামলার রায় ঘোষণার জন্য ১৭ নভেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এ মামলায় সাজার অপেক্ষায় থাকা তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভয়াবহ গণহত্যা, নির্যাতন এবং অন্যান্য মানবতাবিরোধী কার্যক্রম। প্রসিকিউশনের পক্ষে এ মামলায় চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম এবং ফারুক আহমদ সহ অন্যান্য আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৩ অক্টোবর, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এই মামলার সমাপনী বক্তব্য রাখেন। তিনি বিশ্বব্যাপী মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের বিচারের উদাহরণ তুলে ধরেন এবং আসামিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন। এর পরপরই, আসামিপক্ষের আইনজীবী রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেন।
এই মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রসিকিউশন তাকে সর্বোচ্চ সাজা চাইলেও মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ তার খালাস চেয়েছেন। তার ভবিষ্যত নির্ধারণ হবে রায় ঘোষণার পর।
এই মামলায় মোট ৮৪ জন সাক্ষী ছিলেন, এর মধ্যে ৫৪ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া ৩ আগস্ট শুরু হয়ে ৮ অক্টোবর শেষ হয়। পরবর্তীতে ২৩ অক্টোবর যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়।
এ মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যাকাণ্ড, এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৮,৭৪৭, এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২,১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪,০৫৭ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকা ২,৭২৪ পৃষ্ঠা।
অপরাধমূলক কার্যক্রমের এই অভিযোগের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের পূর্ববর্তী উদাহরণ অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও উদাহরণমূলক হতে পারে।


