জাতীয় ডেস্ক
অন্তর্বর্তী সরকারের ১৫ মাসের কাজকর্মকে দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেসসচিব শফিকুল আলম। তিনি মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এক স্ট্যাটাসে জানান, সরকারের বিভিন্ন নীতিমালা এবং কার্যক্রম ইতিমধ্যে প্রায় সব লক্ষ্য অর্জন করেছে।
শফিকুল আলমের বক্তব্য অনুযায়ী, কিছু সমালোচক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের অদক্ষতার অভিযোগ করলেও বাস্তবে দেশটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরেছে এবং বিপ্লব-পরবর্তী প্রতিশোধমূলক হামলা বন্ধ হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি কোনো লবিং ফার্ম ভাড়া না করেই সম্পন্ন হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। মাত্র ১৫ মাসে রেকর্ডসংখ্যক আইন পাস করা হয়েছে, যার মধ্যে বিস্তৃত শ্রম সংস্কার আইনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জুলাই ঘোষণা ও জুলাই চার্টার এমন একটি রাজনৈতিক সমঝোতা তৈরি করেছে যা ভবিষ্যতের জন্য দেশের রাজনৈতিক কাঠামোতে প্রভাব ফেলতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রমের মাধ্যমে নিম্ন আদালতের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, ফলে ভবিষ্যতে কোনো সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জামিন বা মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা কঠিন হবে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ঘটেছে। লালদিয়া টার্মিনাল চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্প রূপান্তরের ভিত্তি স্থাপন হয়েছে, যা বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় ইউরোপীয় বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
শফিকুল আলম আরও জানান, নতুন পররাষ্ট্রনীতি কাঠামো বাংলাদেশের অবস্থানকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কেন্দ্রে স্থাপন করেছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও সরকারের পদক্ষেপের ফলশ্রুতিতে ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম প্রতিরোধ করা হয়েছে, টাকা স্থিতিশীল হয়েছে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে কমে ৭ শতাংশে এসেছে, যা দেশের অর্থনীতিকে পুনরায় প্রবৃদ্ধির পথে ফিরিয়ে এনেছে।
অতীতের নিপীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো আদালতের মাধ্যমে সমাধান করা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনায় র্যাব এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা আইনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে, ফলে ভিন্নমতাবলম্বীদের হয়রানি বন্ধ হয়েছে। গত ১৬ মাসে কোনো সাজানো ‘ক্রসফায়ার’ ঘটনার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
শফিকুল আলম বলেন, গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গুম বন্ধ হয়েছে এবং পূর্ববর্তী চরমপন্থী রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রভাব কমেছে। পাশাপাশি, দেশের সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অতীতের নির্যাতনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি জনপ্রিয় প্রামাণ্যচিত্রগুলোর মাধ্যমে এ প্রভাব প্রতিফলিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ইতিহাসের একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে তার মূল্যায়ন, এত সংক্ষিপ্ত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার এত গুরুত্বপূর্ণ অর্জন করতে পেরেছে যা আগে কোনো সরকার সম্ভব করাতে পারেনি। ১৫ মাসের এই কার্যক্রম দেশের প্রশাসন, অর্থনীতি, আইন শৃঙ্খলা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা রাখে।


