আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইসরায়েল তৃতীয় পবিত্র ইসলামি মসজিদ আল আকসা’র খতিব শেখ একরিমা সাব্বিরের (৮৬) বিরুদ্ধে উত্তেজনা ও ধর্মীয় উসকানি ছড়ানোর অভিযোগে বিচার শুরু করতে যাচ্ছে। জেরুজালেমের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শিগগিরই তার বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।
তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের আগস্টে জেরুজালেম ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সরকারি প্রসিকিউটর শেখ একরিমা সাব্বিরের বিরুদ্ধে ধর্মীয় উসকানি ছড়ানোর অভিযোগ নথিভুক্ত করেন। বর্তমানে আদালত অভিযোগ সংক্রান্ত বিবরণ পর্যালোচনা করছে এবং এই পর্যায় শেষে বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।
শেখ একরিমা সাব্বির ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণের সময় ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই তেহরানে নিহত হন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া। তার মৃত্যুর পর প্রথম জুমার নামাজে খুৎবায় শেখ একরিমা সাব্বির হানিয়ার প্রতি সমবেদনা ও বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। এই ঘটনার পরই তাকে ধর্মীয় উসকানি ছড়ানোর অভিযোগে আল আকসায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
শেখ একরিমার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারাদেশ জারি হয়নি। তবে আল আকসায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, ভ্রমণ সীমিত করা হয়েছে এবং তার বাড়ি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় খুৎবা প্রদানের সময় ইসরায়েলের রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সমালোচনা করার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে।
আল আকসা মসজিদ পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় পূর্ব জেরুজালেম দখল করে ইসরায়েল, এবং ১৯৮০ সালে পুরো জেরুজালেম দখল করেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মামলা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতকে প্রভাবিত করতে পারে। আল আকসা মসজিদে খতিবের বিচার শুরু হওয়ার পর স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপ বিষয়টি আরও জটিল করে তুলতে পারে। এছাড়া, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের অবস্থান, ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া পরবর্তী সংঘাতের দিকনির্দেশক হতে পারে।
এই মামলার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর দ্বারা। তারা অভিযোগ করেছেন যে, ধর্মীয় নেতা এবং খতিবদের রাজনৈতিক সমালোচনার কারণে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হলে এটি ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
জেরুজালেমে এই মামলা শুরু হলে এটি কেবল স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবই ফেলবে না, বরং মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাতেও প্রভাব বিস্তার করতে পারে। পাশাপাশি, ফিলিস্তিনি সম্প্রদায় এবং মুসলিম বিশ্বের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এভাবে, শেখ একরিমা সাব্বিরের বিচার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মধ্যপ্রাচ্য নীতি নির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণবিন্দু হয়ে দাঁড়াবে।


