আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সংঘাত নিরসনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে পরিষদের ১৩টি সদস্য দেশ প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়। রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত থাকে, তবে কোনো দেশ প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেনি।
প্রস্তাবে গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলিটি ফোর্স–আইএসএফ) গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই বাহিনীর দায়িত্ব হবে গাজা অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া এবং মানবিক সহায়তার পথগুলো নিরাপদ রাখা। খসড়া অনুযায়ী, আইএসএফ-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হবে হামাসসহ অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় করা।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, একাধিক দেশ এই বাহিনীতে সদস্য পাঠাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, তবে দেশগুলোর নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি। নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সোমালিয়াসহ ১৩টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ায় গাজা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন।
খসড়া প্রস্তাবের অংশ হিসেবে বলা হয়েছে, আইএসএফ ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে কাজ করবে। গাজায় নতুনভাবে প্রশিক্ষিত একটি ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনী গঠনের কথাও এতে উল্লেখ করা হয়েছে, যা বর্তমান হামাসনিয়ন্ত্রিত নিরাপত্তা কাঠামোর বাইরে পরিচালিত হবে।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ বলেন, আইএসএফ-এর কাজ হবে “এলাকা সুরক্ষিত রাখা, গাজাকে সামরিকীকরণমুক্ত করা, সন্ত্রাসী অবকাঠামো ভেঙে ফেলা, অস্ত্র অপসারণ এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।” ওয়াল্টজের মতে, এই পদক্ষেপ গাজায় দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।
তবে গাজার শাসকদল হামাস প্রস্তাবটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, পরিকল্পনাটি ফিলিস্তিনিদের বৈধ অধিকারকে উপেক্ষা করছে এবং গাজায় “আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব চাপিয়ে দেওয়ার” চেষ্টা করছে। হামাসের দাবি, গাজার অভ্যন্তরে কোনো আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন করা হলে তা ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর নিরস্ত্রীকরণ বা সামরিক সক্ষমতা হ্রাসের মতো দায়িত্ব আইএসএফকে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরিয়ে দেবে। সংগঠনটির ভাষ্যমতে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা গাজার রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, নিরাপত্তা পরিষদের এই প্রস্তাব কার্যকর হলে গাজায় দীর্ঘদিনের সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা মোকাবিলায় নতুন একটি কাঠামো তৈরি হবে। তবে হামাসের অস্বীকৃতি এবং রাশিয়া–চীনের ভোটদানে বিরত থাকার ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, প্রস্তাবটির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
আন্তর্জাতিক মহলে এখন নজর আইএসএফ গঠনের অগ্রগতি এবং এতে কোন দেশগুলো অংশ নেবে তার দিকে। একইসঙ্গে গাজা অঞ্চলে নতুন নিরাপত্তা কাঠামো প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিনি প্রশাসনের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়েও শুরু হয়েছে আলোচনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রস্তাব সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে গাজা উপত্যকায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে, তবে এর জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।


