আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের কংগ্রেস দলের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায়কে “উদ্বেগজনক” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, রায়টি তাকে আতঙ্কিত করেছে এবং এটি কোনো ইতিবাচক ঘটনা নয়।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি দেশের ভেতরে হোক বা বাইরে— মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে নই। তাই এ রায় আমাকে বিশেষভাবে আতঙ্কিত করেছে। অন্য দেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক নয়, তবে এটি যে ইতিবাচক কোনো ঘটনা নয়, তা বলতেই হবে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
এর আগে সোমবার ঢাকার একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অনুপস্থিত অবস্থায় শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত হয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে যান।
চব্বিশের জুলাই গণহত্যার মামলায় ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। একই মামলায় দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও, দেশে থাকা হাসিনা ও কামালের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং জুলাইয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য সরকার এগুলো ব্যবহার করবে।
এই রায়ের প্রেক্ষাপটে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান জটিল হয়ে উঠেছে। সূত্রগুলো উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ইতোমধ্যে দুইবার প্রত্যর্পণ অনুরোধ করেছে, যা ভারতের পক্ষ থেকে পূর্ণভাবে মানা হয়নি। তবে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে অপরাধীদের প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত চুক্তি বিদ্যমান।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রায়টি ভারতের জন্য নীতি ও কূটনৈতিক সমঝোতার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। ক্ষমতায় থাকার সময় শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন এবং ভারতের রাজনৈতিক দলের মধ্যে জনমত রয়েছে, যা তাকে ফেরত না পাঠানোর পক্ষে। এই অবস্থার ফলে, ভারতের সমঝোতা ও নীতি নির্ধারণ আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই ঘটনা সম্ভাব্য কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। যদি ভারতের পক্ষ থেকে ফেরত না দেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশ এটি কূটনৈতিক অবজ্ঞা হিসেবে গণ্য করতে পারে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটাতে পারে।
এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে এসেছে এবং দুই দেশের ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক সম্পর্ক ও যৌথ নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্ব বহন করছে।


