গণঅভ্যুত্থানে সেনাবাহিনী সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল: প্রধান উপদেষ্টা

গণঅভ্যুত্থানে সেনাবাহিনী সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল: প্রধান উপদেষ্টা

জাতীয় ডেস্ক

ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি), মিরপুরে বুধবার (১৯ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত কোর্স-২০২৫ গ্র্যাজুয়েশন সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সেনাবাহিনী সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ড. ইউনূস বাংলাদেশের পাশাপাশি ২৪টি দেশের তরুণ সামরিক অফিসারদের মধ্যে সনদ তুলে দেন।

গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে তিনি আসন্ন ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, দেশবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করতে সেনাবাহিনীর সহায়তা কাম্য। তার বক্তব্যে উল্লেখ ছিল, দেশের স্থিতিশীলতা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামরিক বাহিনীর সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য।

কোর্স-২০২৫-এ বাংলাদেশ, চীন, ভারত, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ ২৪টি দেশের মোট ৩১১ জন তরুণ অফিসার অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে ১৭০ জন, নৌবাহিনী থেকে ৪৫ জন, বিমান বাহিনী থেকে ৩৬ জন এবং বাংলাদেশ পুলিশের ৩ জন কর্মকর্তা কোর্স সম্পন্ন করেন। এছাড়া বিদেশি অংশগ্রহণকারীর মধ্যে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, জর্ডান, কেনিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, নেপাল, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, সিয়েরা লিওন, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, তুরস্ক ও উগান্ডা থেকে ৫৮ জন কর্মকর্তা কোর্সে অংশ নেন। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নকারী অফিসারদের মধ্যে ১৪ জন নারী, যার মধ্যে একজন বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা।

কোর্সে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি একজন অফিসার জানান, ডিএসসিএসসি-তে নেতৃত্ব, কৌশল ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্পর্কিত প্রাপ্ত জ্ঞান দেশের ও দেশের বাইরে যে কোনো সংকট মোকাবিলায় কাজে লাগবে। চীনের এক অংশগ্রহণকারী অফিসার বলেন, বিভিন্ন দেশের সহকর্মীদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় পারস্পরিক সম্পর্ক ও বোঝাপড়া গভীর করেছে এবং প্রাপ্ত জ্ঞান নিজ দেশের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে ডিএসসিএসসির আন্তর্জাতিক সুনামের প্রশংসা করে প্রতিষ্ঠানটির সামরিক শিক্ষায় উৎকর্ষের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। তিনি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নকারী অফিসারদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, অর্জিত জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সংকল্প দেশের অগ্রগতিতে কাজে লাগবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল চৌধুরী মোহাম্মদ আজিজুল হক হাজারী প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান এবং উল্লেখ করেন, কঠোর এক বছরের প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞান অফিসারদের নিজ নিজ বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করবে। তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাহিনী সদর দপ্তর, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ডিএসসিএসসি বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উচ্চতর দায়িত্ব ও নেতৃত্ব প্রদানের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৫,৩২৯ জন কর্মকর্তা, ২০ জন পুলিশ কর্মকর্তা এবং বন্ধুপ্রতিম ৪৫ দেশের ১,৪৬৫ জন বিদেশি সামরিক কর্মকর্তা এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। মোট ৬,৮১৪ জন অফিসার এখানে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন।

অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যগণ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অধ্যাপকবৃন্দ এবং বিভিন্ন দেশের মিলিটারি বা ডিফেন্স অ্যাটাচি উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ