খেলাধুলা ডেস্ক
ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে ১–০ গোলে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন ফরোয়ার্ড মোর্শালিন। এ জয়ে স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা যায়। ম্যাচের আগে এবং চলাকালীন নানা প্রতিক্রিয়া থাকলেও খেলা শেষে সমর্থকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল দলের পারফরম্যান্স, খেলোয়াড়দের অবদান এবং সাম্প্রতিক সময়ে দলকে ঘিরে চলমান নানা প্রশ্ন।
ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে চেষ্টা করে। ভারতের বিপক্ষে দীর্ঘদিনের জয়–খরা কাটাতে দলটি মধ্যমাঠে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং উইং থেকে দ্রুত আক্রমণ গড়ে তোলার কৌশল গ্রহণ করে। প্রথমার্ধে উভয় দলই গোলের সুযোগ তৈরি করলেও সেগুলোকে কাজে লাগাতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ ভেদ করে গোলের দেখা পায়। মোর্শালিনের লক্ষভেদে দল শক্তিশালী মানসিক সুবিধা অর্জন করে এবং বাকি সময়টি গোলের ব্যবধান ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে সমর্থকরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও ম্যাচ শেষে বেশ কয়েকটি ইস্যু নিয়ে দর্শকদের মধ্যে আলোচনা দেখা যায়। মাঠে উপস্থিত কয়েকজন সমর্থক জানান, দলের কিছু খেলোয়াড় গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফরম্যান্স করে আসছেন, যা এই জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাঁরা মনে করেন, রক্ষণভাগ এবং মধ্যমাঠের সমন্বিত খেলায় দলের স্থিতিশীলতা স্পষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকাতে একজন খেলোয়াড়ের গুরুত্বপূর্ণ অবদান নিয়েও দর্শকদের মধ্যে আলোচনা হয়। বেশ কয়েকজন সমর্থক মনে করেন, ওই খেলোয়াড় পুরো ম্যাচজুড়ে বহুমুখী দায়িত্ব পালন করেছেন, যা দলের রক্ষণভাগকে আরও শক্তিশালী করেছে।
তবে ম্যাচ পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় দলের কৌশলগত প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা ওঠে। মাঠে উপস্থিত সমর্থকদের কেউ কেউ মন্তব্য করেন, খেলোয়াড়দের পারস্পরিক যোগাযোগ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাম্প্রতিক সময়ে উন্নতি দেখা গেলেও কিছু মুহূর্তে সমন্বয় ঘাটতি চোখে পড়ে। তাঁদের ধারণা, ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে কৌশলগত নির্দেশনা আরও স্পষ্ট হলে মাঠে সিদ্ধান্ত গ্রহণ আরও কার্যকর হতে পারত।
এ ছাড়া প্রধান কোচের মেয়াদ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও দর্শকদের মধ্যে নানা মন্তব্য পাওয়া যায়। কয়েকজন সমর্থক মনে করেন, দলের সামগ্রিক উন্নতি নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। তাঁরা বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি করতে কোচিং সেটআপ, খেলোয়াড়দের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কৌশলগত প্রশিক্ষণের ওপর আরও জোর দিতে হবে। বর্তমানে প্রধান কোচের সঙ্গে চুক্তি আগামী ২০২৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বহাল রয়েছে। সমর্থকদের মতে, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) উচিত দলের পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে বিশদ মূল্যায়ন করা।
ম্যাচকে ঘিরে টিকিট সংগ্রহ নিয়েও স্টেডিয়ামের বাইরে এবং ভেতরে আলোচনা হয়। ম্যাচকে কেন্দ্র করে অল্প সময়ের মধ্যেই টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়। তবে খেলা শুরুর পরও গ্যালারির কিছু অংশ ফাঁকা দেখা যাওয়ায় বেশ কিছু দর্শক অভিযোগ তোলেন। তাঁদের দাবি, নির্ধারিত মূল্য ছাড়াও অনানুষ্ঠানিকভাবে অতিরিক্ত দামে টিকিট বিক্রি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁরা আশঙ্কা করেন। বিষয়টি যাচাই ও প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে তাঁরা মনে করেন।
বাংলাদেশ–ভারত ম্যাচটি সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ফুটবল অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল। দীর্ঘদিন পর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জয়ের ফলে দল নতুন আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছে। এই জয়কে অনেকে দেশের ফুটবলে সম্ভাব্য ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হিসেবে দেখছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ, আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংখ্যা বৃদ্ধি, বয়সভিত্তিক দলগুলোর উন্নয়ন এবং ক্লাব ফুটবলের কাঠামোগত সংস্কার—এসব উদ্যোগ মাঠের সাফল্য ধরে রাখার জন্য জরুরি।
বাংলাদেশ দল আগামী মাসগুলোতে আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নেবে। ফুটবলবিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ভালো দিক নির্দেশ করে। তবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় স্থায়ী সাফল্য নিশ্চিত করতে পরিকল্পিত বিনিয়োগ, পেশাদার ব্যবস্থাপনা ও কৌশলগত প্রস্তুতি অপরিহার্য। ভারতের বিপক্ষে এই জয় দলকে নতুন আত্মবিশ্বাস দিলেও সামনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।


