অর্থনীতি ডেস্ক
নিজস্ব অর্থায়নে কেনা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) দ্বিতীয় নতুন জাহাজ ‘এমভি বাংলা’ সমুদ্রযাত্রার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। চীনের নানইয়াং শিপইয়ার্ডে নির্মিত এই জাহাজটি ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সমুদ্রে ট্রায়াল রান শুরু করবে। জাহাজ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় বিএসসির বিশেষজ্ঞ টিম ও শিপইয়ার্ডের প্রকৌশলীরা অংশ নেবেন। কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে তা সংশোধন করার পরই জাহাজটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হবে। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে আগামী বছরের শুরু থেকে জাহাজটি বাংলাদেশের পতাকা বহন করে আন্তর্জাতিক রুটে পণ্য পরিবহন শুরু করবে।
বিএসসির কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৩ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের ‘এমভি বাংলা’র বহনক্ষমতা ৬৩ হাজার ৫০০ টন। এর দৈর্ঘ্য ১৯৯ দশমিক ৯৯ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। জাহাজটি বহরে যুক্ত হলে বিএসসির মোট জাহাজ সংখ্যা সাতটি হবে।
২০১৯ সালের পর দীর্ঘ ছয় বছর নতুন জাহাজ কেনায় স্থবিরতা কাটিয়ে এ বছর রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থা দুটি নতুন জাহাজ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে ‘এমভি বাংলার প্রগতি’ গত মাসেই বহরে যুক্ত হয়ে সেবা দেওয়া শুরু করেছে।
বিএসসির কর্মকর্তারা জানান, দুটি নতুন জাহাজের মাধ্যমে বছরে ২০০ কোটি টাকার বেশি আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি নতুন জাহাজের পরিচালনায় বছরে অন্তত ১৫০ নাবিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডোর মাহমুদুল মালেক জানিয়েছেন, এবার প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ কেনা হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যাংকে স্থায়ী আমানত রাখার তুলনায় জাহাজে বিনিয়োগ অধিক লাভজনক। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে দুটি জাহাজ বহরে আনা সম্ভব হয়েছে, যার মধ্যে একটি ইতিমধ্যেই হস্তান্তর করা হয়েছে এবং অপরটি শিগগিরই বহরে যুক্ত হবে।
বিএসসি সূত্র জানায়, প্রতিযোগিতামূলক দর যাচাইয়ের ভিত্তিতে গত ৩ জুন আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করা হয়। কারিগরি মূল্যায়নে দুটি প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। এরপর আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি থেকে ৯৩৬ কোটি টাকায় দুটি জাহাজ কেনার অনুমোদন দেয়। চীনের শিপইয়ার্ডে নির্মিত হলেও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে এই আমেরিকান কোম্পানি।
নতুন জাহাজের চালু হওয়া বিএসসির বহরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং দেশের আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহণ খাতে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান শক্ত করবে। পাশাপাশি এটি দেশের সমুদ্রপরিবহন খাতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে মূল্যায়িত হচ্ছে।


