জাতীয় ডেস্ক
ঢাকা মেট্রোরেলের স্থায়ী কার্ডধারী যাত্রীদের জন্য নতুন ডিজিটাল সেবা চালু করতে যাচ্ছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। আগামী ২৫ নভেম্বর থেকে ঘরে বসেই র্যাপিড পাস ও এমআরটি পাস কার্ড অনলাইনে রিচার্জ করা যাবে। স্টেশনের কাউন্টারে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষার পরিবর্তে যাত্রীরা নিজস্ব ডিভাইস ব্যবহার করে রিচার্জ সম্পন্ন করতে পারবেন। সেবাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (সড়ক, সেতু ও রেল মন্ত্রণালয়) শেখ মইনউদ্দিন।
এই সেবা চালুর ফলে মেট্রোরেলের দুই ধরনের স্থায়ী কার্ড—র্যাপিড পাস ও এমআরটি পাস—ব্যবহারকারীরা তাদের কার্ডে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অনলাইনে যুক্ত করতে পারবেন। ডিটিসিএর তথ্য অনুযায়ী, সেবাটি চালুর মূল উদ্দেশ্য হলো যাত্রীদের সময় সাশ্রয় করা এবং স্টেশনভিত্তিক টিকিট বুথে ভিড় কমানো। বর্তমানে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক যাত্রী বিভিন্ন স্টেশন থেকে টিকিট সংগ্রহ বা রিচার্জ করতে এসে লাইনে অপেক্ষা করেন, যা যাত্রা শুরুর সময়ে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
তবে অনলাইন রিচার্জ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও যাত্রীর কার্ডে অর্থ সম্পূর্ণভাবে সক্রিয় করতে একটি অতিরিক্ত ধাপ অনুসরণ করতে হবে। রিচার্জ সম্পন্ন হওয়ার পর যাত্রার আগে যাত্রীকে স্টেশন প্রাঙ্গণে স্থাপিত অ্যাড ভ্যালু মেশিনে (এভিএম) একবার কার্ড স্পর্শ করিয়ে তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। এভিএমে হালনাগাদ সম্পন্ন হলে নতুন অর্থ কার্ডে যুক্ত হয়ে যাবে এবং সেই অর্থ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুনরায় স্পর্শ করানোর প্রয়োজন হবে না। তবে প্রতিবার নতুন রিচার্জের পর এভিএমে কার্ড আপডেট করা বাধ্যতামূলক।
ডিটিসিএর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়া যাত্রীদের কার্ড নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ডিজিটাল লেনদেনের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য করা হচ্ছে। অনলাইন রিচার্জের অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে সংরক্ষিত থাকলেও তা সক্রিয় না করলে স্টেশনে প্রবেশের সময় গেট কার্ডটি গ্রহণ করতে পারবে না। ফলে যাত্রীদের আগেভাগেই এভিএমে কার্ডটি আপডেট করে নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে একক যাত্রার টিকিট কেনার ক্ষেত্রে আগের নিয়মই বহাল থাকবে। যারা সিঙ্গেল জার্নি টিকিট ব্যবহার করেন, তাদের স্টেশন বুথ থেকেই টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। অনলাইন রিচার্জ সুবিধা শুধুমাত্র স্থায়ী কার্ডধারীদের জন্য প্রযোজ্য হওয়ায় সিঙ্গেল টিকিট ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আসছে না।
বর্তমানে মেট্রোরেলে দুটি স্থায়ী কার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে এমআরটি পাস পরিচালনা করে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এটি মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সংস্থার নিজস্ব কার্ড। অপরদিকে র্যাপিড পাসকার্ডটি ডিটিসিএর অধীনে পরিচালিত হয় এবং এটি বাস, ট্রেনসহ বিভিন্ন গণপরিবহনে ব্যবহারের জন্য নকশা করা হয়েছে। অনলাইন রিচার্জ চালুর ফলে উভয় কার্ডই সমান সুবিধায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে রিচার্জ করা যাবে।
ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার জানান, এই উদ্যোগ নগর পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও ডিজিটাল ও যাত্রীবান্ধব করতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, স্টেশনের ভিড় কমানোর পাশাপাশি যাত্রার প্রস্তুতিও হবে সহজ ও দ্রুত। যে কোনো সময় কার্ড রিচার্জ করার সুবিধা মানুষকে অপ্রত্যাশিত যাত্রাবিরতির ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখবে।
অনলাইন রিচার্জের জন্য যাত্রীকে প্রথমে ডিটিসিএর নির্ধারিত ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপে প্রবেশ করে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। এরপর রিচার্জ অপশন থেকে ব্যবহৃত কার্ডের ধরন নির্বাচন করে ব্যাংক কার্ড বা মোবাইল আর্থিক সেবা—উভয় মাধ্যমের মধ্যে যেকোনো একটি ব্যবহার করে অর্থ পরিশোধ করা যাবে। রিচার্জ সম্পন্ন হওয়ার পর সিস্টেমটি যাত্রীকে একটি ডিজিটাল নিশ্চিতকরণ বার্তা প্রদান করবে, যা পরে এভিএমে কার্ড আপডেট করার সময় কাজে লাগবে।
প্রবেশাধিকার, পেমেন্ট নিরাপত্তা, লেনদেন সুরক্ষা এবং দ্রুত কার্যসম্পাদন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যৌথভাবে সিস্টেমটি পরীক্ষা করেছে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, রাজধানীর বিপুলসংখ্যক যাত্রী এই সেবার মাধ্যমে দ্রুত ও নির্বিঘ্নে রিচার্জ সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন। এর ফলে মেট্রোরেল স্টেশনগুলোর সার্বিক যাত্রী ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এবং দৈনন্দিন যাত্রা আরও স্বচ্ছন্দ হবে।


