সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রায়কে কেন্দ্র করে অস্থিরতার আশঙ্কা নেই বলছে সরকার

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রায়কে কেন্দ্র করে অস্থিরতার আশঙ্কা নেই বলছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর দেশে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি এবং বিজয় দিবসকে সামনে রেখে কোনো নিরাপত্তা শঙ্কাও নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, সরকার পরিস্থিতির প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছে এবং প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্বেগের কারণ দেখা যায়নি।

বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একটি সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ মন্তব্য করেন। সভায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি, বিজয় দিবসের কর্মসূচি এবং সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। সভা শেষে সাংবাদিকরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় এবং তার পরবর্তী প্রেক্ষাপট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুললে উপদেষ্টা এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেন।

তিনি বলেন, রায় ঘোষণার পর দেশজুড়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো সহিংসতা বা উত্তেজনার ঘটনা ঘটেনি, যা থেকে বোঝা যায় যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে এবং সাধারণ জনগণও শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রেখেছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে যেসব কর্মসূচি পূর্বঘোষিত ছিল, সেগুলোতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আগের মতোই দায়িত্ব পালন করবে এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও জোরদার করা হয়েছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে গত বছর বিজয় দিবসের প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়নি এবং এবছরও প্যারেড হবে না। তবে অন্যান্য সব আনুষ্ঠানিকতা যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়কর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যাতে জাতীয় দিবসটি শান্তিপূর্ণভাবে উদ্‌যাপন করা যায়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রায় ঘোষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় সাধারণত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির ঝুঁকি থাকে। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। সরকার দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে এবং প্রয়োজন হলে তা আরও জোরদার করা হবে। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সব সময় নজরদারি চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য বা ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন করেনি।”

সাংবাদিকরা সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পরিচয়ে ব্যক্তিকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এ ধরনের অভিযোগ প্রথমবারের মতো তিনি শুনেছেন এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, কোনো আইনানুগ প্রক্রিয়া ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার বা অপহরণ করা উচিত নয়। এ ধরনের অভিযোগ উঠলে তা অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে কাউকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। যদি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা পরিচয় ব্যবহার করে এ ধরনের কাজ করে থাকে, তাহলে তা আইন লঙ্ঘনের শামিল। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা হবে, এবং প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আশ্বাস দেন যে এ ধরনের ঘটনার তদন্তে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হবে এবং প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হবে।

সাম্প্রতিক রায় ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে কি না—এ প্রশ্নে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল এবং জনগণও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আস্থা রেখেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিজয় দিবস শান্তিপূর্ণভাবে উদ্‌যাপিত হবে এবং এ উপলক্ষে দেশব্যাপী কোনো ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হবে না।

তিনি আরও বলেন, সরকার গণতান্ত্রিক ও আইনানুগ প্রক্রিয়াকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। রাজনৈতিক বা আইনগত যেকোনো ইস্যুতে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব এবং সরকার তা পালন করবে। তিনি সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন, সত্য তথ্য যাচাই করে প্রচার করতে এবং গুজব বা অনির্ভরযোগ্য তথ্য প্রচার না করতে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে সরকার বর্তমান পরিস্থিতিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে এবং একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিজয় দিবসের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসকে সামনে রেখে দেশের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে স্থিতিশীল থাকে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

জাতীয়