আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর টেরনোপিলে রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছে এবং আরও বহুজন নিখোঁজ রয়েছে। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহোর ক্লাইমেনকো জানান, হামলার সময় তিন শিশুসহ প্রায় ১০০ জন আহত হয়েছেন। হামলার ফলে শহরের আবাসিক ভবন, জ্বালানি এবং পরিবহন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্লাইমেনকো জানিয়েছেন, রাশিয়া এককভাবে ৪৭৬টি ড্রোন এবং ৪৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে টেরনোপিল শহরের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে। হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল আবাসিক এলাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। শীতের কঠোর পরিবেশে এই হামলার কারণে কয়েকটি অঞ্চলে জরুরি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
হামলার সময় টেরনোপিলের একটি আবাসিক ভবনে আগুন ধরে যায়। দমকলকর্মীরা রাতভর আগুন নেভানোর চেষ্টা চালান। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা লোকদের উদ্ধারে জরুরি কর্মীরা তল্লাশি চালাচ্ছেন। ক্লাইমেনকো জানান, একটি ভবনের দুটি প্রবেশপথ সম্পূর্ণরূপে পুড়ে গেছে এবং কোনো অ্যাপার্টমেন্ট অক্ষত থাকেনি। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় অনেক বাসিন্দা জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন।
স্থানীয় কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, হামলায় তিন শিশু নিহত হয়েছে। ওকসানা কোবেল নামের এক বাসিন্দা জানান, তার ছেলে নবম তলার একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকাকালীন বিস্ফোরণ ঘটেছে। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের সময় ছেলেকে ফোন করে তিনি তাকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেন, কিন্তু ছেলেকে জীবিত পাওয়ার আশা পূর্ণ হয়নি।
হামলার পর থেকে স্থানীয় জরুরি সেবা ও উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রাণহানির সংখ্যা কমানোর জন্য তৎপর রয়েছে। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, আহতদের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে এবং মৃতদেহের শনাক্তকরণের কাজ চলছে। এছাড়া, নিরাপত্তা বাহিনী হামলার পেছনের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ ও ভবিষ্যতে আরও হামলা প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করছেন, এ ধরনের আক্রমণ স্থানীয় নাগরিকদের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে, যার মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য এবং দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলার কারণে স্থানীয় প্রশাসন জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি পুনর্বাসনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
টেরনোপিলের এই হামলা ইউক্রেনে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে মানবিক সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ইউক্রেনের সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করছে।
এদিকে, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার ফলে শহরের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো যেমন বিদ্যুৎ, পানি ও পরিবহন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় স্থানীয় জনগণ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না। প্রশাসন জরুরি সরঞ্জাম এবং ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছে।


