নিজস্ব প্রতিবেদক
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) চট্টগ্রাম থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠান মারওয়ান অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানি এলএলসির কাছে তিনটি ল্যান্ডিং ক্রাফট হস্তান্তর করা হবে। জাহাজগুলোর নাম মায়া, এসএমএস এমি এবং মুনা। বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর তীরে এই জাহাজগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তিনটি জাহাজই সম্পূর্ণভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী নির্মিত। এগুলো অফশোর সাপ্লাই, মালবাহী পরিবহন এবং সমুদ্র বাণিজ্যের বিভিন্ন কাজে ব্যবহারযোগ্য। আনুষ্ঠানিক হস্তান্তরের পর জাহাজগুলো আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে।
জাহাজ তিনটিরই দৈর্ঘ্য ৬৯ মিটার, প্রস্থ ১৬ মিটার এবং ড্রাফট ৩ মিটার। আন্তর্জাতিক ক্ল্যাসিফিকেশন সোসাইটি ব্যুরো ভেরিটাসের মানদণ্ড অনুযায়ী নির্মিত এই ল্যান্ডিং ক্রাফটগুলো ১০ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম। প্রায় ৭০০ বর্গমিটার ক্লিয়ার ডেক স্পেস থাকায় এগুলো ভারী যন্ত্রপাতি এবং বাল্ক কার্গো পরিবহনে ব্যবহারযোগ্য।
ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি জাহাজের চাহিদা পুনরায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তিনটি ল্যান্ডিং ক্রাফটের হস্তান্তর শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক সাফল্য নয়, এটি দেশের জাহাজনির্মাণ শিল্পের জন্যও একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের জাহাজনির্মাণ শিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমবর্ধমান সুনাম অর্জন করেছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী জাহাজ নির্মাণ করায় বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে। এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া দেশের জাহাজনির্মাণ খাতের রপ্তানি সম্ভাবনাকে আরও সম্প্রসারিত করতে সহায়ক হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশি জাহাজনির্মাণ শিল্প ২০১০-এর দশকের পর থেকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। নৌপরিবহন খাতের আধুনিকীকরণ, দক্ষ শ্রমিক এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে দেশের তৈরি জাহাজগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজারে সহজে গ্রহণযোগ্যতা মিলছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এই ধরনের জাহাজের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্লেষকরা আরও দেখাচ্ছেন, দেশের জাহাজনির্মাণ খাত আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মানসম্পন্ন জাহাজ উৎপাদন করতে পারায় এটি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে গড়ে উঠছে। হস্তান্তরকৃত ল্যান্ডিং ক্রাফটগুলো না শুধু বাণিজ্যিক কার্যক্রমে সহায়ক হবে, বরং বাংলাদেশের জাহাজনির্মাণ শিল্পের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানও দৃঢ় করবে।
কর্ণফুলী নদীর তীরে জাহাজগুলো প্রস্তুত রাখা এবং হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু সম্পন্ন হওয়া দেশের জাহাজনির্মাণ শিল্পের ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদর্শন করছে।


