আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের একটি কমিশন জানিয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের চারদিনব্যাপী সামরিক সংঘাতে পাকিস্তান উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। ‘দ্য ইউএস-চায়না ইকোনোমিক অ্যান্ড সিকিউরিটি রিভিউ কমিশন ২০২৫’ তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য কংগ্রেসের কাছে হস্তান্তর করেছে। প্রতিবেদনে ভারত-পাকিস্তানের লড়াইকে গত ৫০ বছরের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র সংঘাত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং চীনের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, এই যুদ্ধে পাকিস্তান চীনের সরবরাহকৃত আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে সামরিক কার্যক্রমে সফলতা পেয়েছে। চীনের জে-১০ যুদ্ধবিমান, পিএল-১৫ এয়ার টু এয়ার মিসাইল এবং এইচকিউ-৯ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যবহার পাকিস্তানের সামরিক দক্ষতা এবং সরাসরি অস্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার সুযোগ তৈরি করেছে। এছাড়া, যুদ্ধের সময় পাকিস্তান চীনের গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, যদিও পাকিস্তান এ তথ্য ব্যবহারের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি।
এ সংঘাতের প্রেক্ষাপট হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এপ্রিলে ভারতের জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। হামলার দায় পাকিস্তানের উপর আনা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ৭ মে ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় সামরিক অভিযান চালায়। পাকিস্তানও পাল্টা প্রতিহতকৌশল শুরু করে। কমিশন জানিয়েছে, এই লড়াইতে উভয় দেশ একে অপরের ওপর গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে গভীর ও তীব্র হামলা চালিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, চীনের অস্ত্র ও সরঞ্জাম পাকিস্তানের সামরিক শক্তিকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, পাকিস্তানের সামরিক অস্ত্রের প্রায় ৮২ শতাংশ চীন সরবরাহ করে থাকে। এতে চীনের সামরিক সহায়তার গুরুত্ব এবং আঞ্চলিক ক্ষমতা প্রদর্শিত হয়েছে।
প্রতিবেদন আরও বলেছে, এই সংঘাত ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ভূ-রাজনৈতিক ও সামরিক ভারসাম্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের সরাসরি সামরিক সহায়তা এবং প্রযুক্তি সরবরাহ দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। এছাড়া, এই সংঘাতের মাধ্যমে চীনের আধুনিক অস্ত্র ব্যবহারের সক্ষমতা এবং পাকিস্তানের সামরিক কৌশলগত প্রস্তুতি বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভবিষ্যতে এ ধরনের সংঘাত এবং তাতে চীনের সরাসরি বা পরোক্ষ ভূমিকা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ও সামরিক স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। কমিশনও প্রতিবেদনে পরামর্শ দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই অঞ্চলে অস্ত্র সরবরাহ, গোয়েন্দা তথ্য এবং সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সর্তক পর্যবেক্ষণ চালাতে হবে।
এভাবে, মে মাসের চারদিনব্যাপী এই সংঘাত শুধু ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সাম্প্রতিক উত্তেজনাকে প্রতিফলিত করছে না, বরং চীনের সরাসরি সামরিক অংশগ্রহণ ও আধুনিক অস্ত্র ব্যবহারের ফলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সামরিক ভারসাম্যের ওপর সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।


