বিদেশে অবস্থানরত ভোটারদের পোস্টাল ব্যালটে ভোটের নিবন্ধন শুরু

বিদেশে অবস্থানরত ভোটারদের পোস্টাল ব্যালটে ভোটের নিবন্ধন শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদানের জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জারি করা পরিপত্রে জানানো হয়েছে, পোস্টাল ব্যালটে প্রদত্ত ভোট গণনার সময়ে ঘোষণাপত্রে ভোটারের যথাযথ স্বাক্ষর না থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যালট বাতিল করা হবে। বুধবার ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব মনির হোসেন স্বাক্ষরিত পরিপত্রে এই নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

পরিপত্র অনুযায়ী, বিদেশে অবস্থানরত ভোটারদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি-সহায়ক পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। নিবন্ধিত ভোটাররা ডাক বিভাগের মাধ্যমে প্রেরিত ব্যালট পেপারে ভোট প্রদান করবেন এবং নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে ফিরে পাঠাবেন। রিটার্নিং অফিসার ব্যালট গণনার সময় প্রথমে ঘোষণাপত্রের স্বাক্ষরের সত্যতা যাচাই করবেন। যথাযথভাবে স্বাক্ষরযুক্ত না হলে ঘোষণাপত্রটি অবিলম্বে বাতিল হিসাবে গণ্য হবে এবং ব্যালটের খাম না খুলেই পুরো প্যাকেট সংরক্ষণ করা হবে। এই প্রক্রিয়া ভোটের স্বচ্ছতা ও অখণ্ডতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে।

পরিপত্রে আরও বলা হয়, ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিদেশে থাকা বাংলাদেশি ভোটাররা অনলাইনে আবেদন করে ভোটদানে নিবন্ধিত হতে পারবেন। অ্যাপটির মাধ্যমে প্রবাসী ভোটাররা নিবন্ধন প্রক্রিয়া, ব্যালট পেপার প্রেরণ, প্রাপ্তি ও পাঠানোর সার্বিক অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। আবেদনকারীর পরিচয় যাচাইয়ের পর ডাক বিভাগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিদেশি ঠিকানায় ব্যালট পাঠানো হবে। এতে ভোটারদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিরাপদে ভোট প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর অ্যাপের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থীদের তালিকা ভোটারদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তালিকা দেখে প্রবাসী ভোটাররা প্রাপ্ত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেবেন। এরপর নির্ধারিত ফিরতি খামে ব্যালটটি ডাকযোগে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাতে হবে। ডাক বিভাগ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ব্যালট প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, বিদেশে অবস্থানরত ভোটারদের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য, নথি যাচাই ও ব্যালট প্রেরণের কার্যক্রম ধাপে ধাপে সম্পন্ন হবে। পদ্ধতিটি প্রথমবারের মতো বৃহৎ পরিসরে প্রয়োগ করা হচ্ছে; ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকারের কার্যকর প্রয়োগে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদানের নিবন্ধনের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে সকল আগ্রহী ভোটার যথাসময়ে আবেদন সম্পন্ন করতে পারেন।

নির্বাচন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা মনে করেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি-নির্ভর এই প্রক্রিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখবে। দেশের বাইরে অবস্থান করায় বহু ভোটারের নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণ সম্ভব হয় না; পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তারা নিরাপদে ও সুশৃঙ্খলভাবে ভোট দিতে পারবেন। একই সঙ্গে ব্যালট প্রেরণ, গ্রহণ ও গণনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ইসি বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

ইসি আরও জানিয়েছে, প্রতিটি ব্যালট সঠিকভাবে পৌঁছানো, সংরক্ষণ এবং গণনার জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ডাক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। রিটার্নিং অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যালট যাচাই, বাতিলকরণ ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে সম্পন্ন করার। নির্বাচনী বিধিমালায় নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে ফলাফল চূড়ান্ত করার পর সংশ্লিষ্ট তথ্য কমিশনে প্রেরণ করা হবে।

বিদেশে অবস্থানরত ভোটারদের জন্য পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির সফল বাস্তবায়ন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন এই উদ্যোগের মাধ্যমে বৃহৎ প্রবাসী ভোটারগোষ্ঠী দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন, যা নির্বাচনী অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশ শীর্ষ সংবাদ