ভারত-পাকিস্তান সম্ভাব্য পরমাণু সংঘাত প্রতিরোধে ট্রাম্পের দাবি

ভারত-পাকিস্তান সম্ভাব্য পরমাণু সংঘাত প্রতিরোধে ট্রাম্পের দাবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন যে, তিনি ৩৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য পরমাণু যুদ্ধ রোধ করেছেন। গতকাল ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ইউএস-সৌদি ইনভেস্টমেন্ট ফোরামের সম্মেলনে ট্রাম্প এই তথ্য জানিয়েছেন।

ভাষণে তিনি জানান, “ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই তখন যুদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। বিষয়টি জানার পর আমি তাদের বলেছিলাম, ‘যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেন, তবে প্রত্যেকের ওপর ৩৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, তাদের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করলে তার ধুলোবালি দূরবর্তী এলাকা যেমন লস অ্যাঞ্জেলেসেও পৌঁছাবে, যা কখনও গ্রহণযোগ্য নয়।”

ট্রাম্প বলেন, শুল্কের হুমকি প্রদানের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ তাকে ফোন করে জানান যে পাকিস্তান সংঘাত বন্ধে রাজি। একইভাবে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীও ট্রাম্পকে ফোন করে ভারতও যুদ্ধবিরতিতে প্রস্তুত বলে জানায়। তিনি দাবি করেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এই উত্তেজনা শুরু হয় ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগাম উপজেলার বৈসরন উপত্যকায় সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে। দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ওই হামলায় ২৬ জনকে হত্যা করে, যারা ২৫ ভারতীয় ও একজন নেপালের নাগরিক ছিলেন। এই গোষ্ঠী পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই তৈয়্যার শাখা হিসেবে পরিচিত।

এরপর, ভারতের বিমান বাহিনী ৭ মে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযান পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরসহ একাধিক এলাকায় সন্ত্রাসী স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে চালানো হয়। অভিযানে পাকিস্তানের ১৩ সেনাসদস্যসহ মোট ৫১ জন নিহত হন এবং ৭৮ জন আহত হন।

পাকিস্তান পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ১০ মে ‘বুনিয়ান উন মারসুস’ নামে একটি সেনা অভিযান চালায়। ভারতের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই অভিযানে ভারতের ৫ সেনাসদস্য ও ১৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।

সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর ডিজিএমওরা ১০ মে প্রথম বৈঠক করেন। ভারতীয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই ও পাকিস্তানি মেজর জেনারেল কাশিফ আবদুল্লাহের টেলিফোন বৈঠকের পর ১২ মে পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। পরে আরও দুটি দু’দিনের মেয়াদে যুদ্ধবিরতি বাড়ানো হয়। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার এই দুটি পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ যুদ্ধবিরতিতে আছে।

এর আগে ট্রাম্প কয়েকবারই দাবি করেছেন যে, তিনি ভারতের এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য পরমাণু সংঘাত রোধ করেছেন। পাকিস্তানের সরকার তার দাবির সত্যতা স্বীকার করেছে। তবে ভারত এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে বিভিন্ন কূটনৈতিক পদক্ষেপে নজর দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়ার এই ধরনের সংকট পরমাণু অস্ত্রশক্তিধর দেশগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা ও অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে।

আন্তর্জাতিক