মানবদেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপন সহজীকরণে নতুন অধ্যাদেশ জারি

মানবদেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপন সহজীকরণে নতুন অধ্যাদেশ জারি

জাতীয় ডেস্ক

মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন ও প্রতিস্থাপনের আইনগত কাঠামো হালনাগাদ করতে সরকার ‘মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর গেজেট জারি করেছে। গতকাল (বুধবার) রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে জারি করা এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে মানবদেহে অঙ্গ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং আইনানুগ ব্যবহারের বিষয়গুলো নতুনভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে।

অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়, মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ১৯৯৯-এর বিধান বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপনসহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা সেবার বিস্তারের জন্য তা অপ্রতুল। অঙ্গ ব্যবসা, অবৈধ পাচার প্রতিরোধ এবং প্রতিস্থাপন ব্যবস্থাকে সুসংহত করার লক্ষ্যে পুরোনো আইন রহিত করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।

অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন পায় গত ১৭ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের ৩৪তম বৈঠকে। এতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন। ওই বৈঠকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা যুগোপযোগী করার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, অঙ্গ প্রতিস্থাপনসংক্রান্ত বিদ্যমান আইনের বিভিন্ন অংশ দীর্ঘদিন ধরে আপডেট হয়নি, বিশেষ করে কিডনি ও কর্ণিয়া প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিধানগুলো। তিনি বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন এবং রোগীর প্রয়োজন বিবেচনায় প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া সহজীকরণ জরুরি হয়ে উঠেছিল।

নতুন অধ্যাদেশে জীবিত দাতার মাধ্যমে অঙ্গ দানের ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের পরিধি কিছুটা বিস্তৃত করা হয়েছে। প্রেস সচিব জানান, পূর্বের আইনে নিকট আত্মীয় হিসেবে মূলত বাবা, মা, ভাই-বোন বা সন্তানদের মধ্যেই দানের অনুমতি সীমাবদ্ধ ছিল। সংশোধিত কাঠামোতে ভাতিজা, ভাগিনা প্রভৃতি আত্মীয়দের অঙ্গ দানের সুযোগ যুক্ত করা হয়েছে। এ পরিবর্তনের ফলে দাতার পরিধি বাড়ায় রোগীরা প্রয়োজনীয় অঙ্গ পেতে তুলনামূলকভাবে বেশি সুযোগ পাবেন বলে আশা করা হয়।

তিনি আরও জানান, দাতা-গ্রহীতার মধ্যকার সম্পর্ক যাচাই, প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার অনুমোদন এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের মাননিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত বিধিবিধানও অধ্যাদেশে নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব বিধান প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং সম্ভাব্য অপব্যবহার রোধে সহায়ক হবে। অধ্যাদেশে অঙ্গ সংগ্রহের পর সংরক্ষণ, পরিবহন এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের বিষয়েও বিস্তারিত নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অঙ্গ প্রতিস্থাপনসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বিবেচনায় অধ্যাদেশে অবৈধ অঙ্গ পাচার প্রতিরোধে কঠোর দণ্ড বিধান রাখা হয়েছে। দাতা-গ্রহীতার সম্মতি, নথিভুক্তিকরণ ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বিষয়ে কঠোর নীতি অনুসরণের বাধ্যবাধকতা যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অঙ্গ বাণিজ্য, কিংবা অবৈধ প্রতিস্থাপন কার্যক্রম পরিচালনার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে।

সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আশা করছেন, নতুন অধ্যাদেশ কার্যকর হলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া আরও সুসংহত হবে। বিশেষ করে কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো চিকিৎসার জন্য বিদেশগমন কমার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ দেশে অনুমোদিত হাসপাতালের সক্ষমতা ও প্রক্রিয়া উন্নত করার সুযোগ তৈরি হবে। অধ্যাদেশের মাধ্যমে নীতিমালা স্পষ্ট হওয়ায় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ এবং প্রতিস্থাপন কার্যক্রম সম্প্রসারণে উৎসাহিত হতে পারবে।

স্বাস্থ্যসেবা খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, অঙ্গ সংযোজন ও প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে একটি যুগোপযোগী আইন কাঠামো প্রণয়ন দীর্ঘদিন প্রয়োজন ছিল। নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে দাতা-গ্রহীতার নিরাপত্তা, চিকিৎসা মানদণ্ড এবং আইনানুগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার পথ আরও সুদৃঢ় হলো। এর ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি রোগীদের চিকিৎসা গ্রহণের প্রক্রিয়াও আরও সহজ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতীয়