সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কনটেন্ট প্রকাশে আগ্রহহীনতা জানালেন অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কনটেন্ট প্রকাশে আগ্রহহীনতা জানালেন অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান

বিনোদন ডেস্ক

ছোট পর্দার অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে ছবি ও ভিডিও সংগ্রহে থাকলেও সেগুলো আর প্রকাশ করতে আগ্রহ বোধ করছেন না। তাঁর এই মন্তব্য ভক্তদের মাঝে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ *তাকদীর*–এ অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন সাদিয়া আয়মান। সিরিজটিতে অভিনয়ের পর থেকেই তিনি দর্শকমহলে নিজের জায়গা আরও মজবুত করেন। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন নাটক ও ওয়েব কনটেন্টে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি প্রাপ্ত হন প্রশংসা ও জনপ্রিয়তা। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত উপস্থিত থেকেছেন; ছবি, ভিডিও এবং বিভিন্ন মুহূর্তের আপডেট শেয়ার করে ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছেন।

তবে সম্প্রতি এক পোস্টে তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তোলা অনেক ছবি ও ভিডিও তাঁর ফোনে জমে আছে; কিন্তু সেগুলো আর প্রকাশ করতে পারছেন না। পোস্টে তিনি লেখেন, বহুবার পরিকল্পনা করেও ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করতে পারেননি। সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগ্রহও কমে গেছে।

তিনি আরও জানান, একটি ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করার আগে নির্বাচনের ধাপ, সম্পাদনা, সঙ্গীত নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সময় ব্যয় করতে হয়। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, এসব প্রক্রিয়া এখন তাঁর কাছে বাড়তি চাপের মতো মনে হয়। বয়স খুব বেশি না হলেও কেন এমন অনুভূতি হচ্ছে—এমন প্রশ্নও তিনি নিজের পোস্টে তোলেন। একইসঙ্গে তিনি জানতে চান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কনটেন্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে অন্যরাও কি এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন কি না।

সাদিয়া লিখেছেন, একটি পোস্টের সঙ্গে উপযুক্ত ক্যাপশন নির্বাচন করাও আলাদা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কোন ক্যাপশন দর্শকের সঙ্গে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, তা ভাবতেই কখনও কখনও আগ্রহ কমে যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে, তাঁর পোস্টটি প্রকাশের পর নেটিজেনদের অনেকে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। একজন মন্তব্য করেন, ছবি বা ভিডিওর সঙ্গে কোন গান ব্যবহার করা হবে—এমন সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েই অনেক সময় মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। আরেকজন মন্তব্যকারী জানান, মন খারাপ বা মানসিক চাপে থাকলে কোনো কিছুই ভালো লাগে না, ফলে কনটেন্ট তৈরি বা প্রকাশের আগ্রহ কমে যায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় শিল্পীদের ক্ষেত্রে এমন অনুভূতি নতুন নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত অনলাইন উপস্থিতি বজায় রাখার চাপ, অনুসারীদের প্রত্যাশা এবং কনটেন্ট তৈরির নির্দিষ্ট কাঠামো অনেক সময় শিল্পীদের ওপর অতিরিক্ত মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যারা অভিনয়ের পাশাপাশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও সক্রিয়, তাঁদের জন্য কাজের চাপ ও ব্যক্তিগত সময়ের ভারসাম্য রাখা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কনটেন্ট প্রকাশের আগে ছবি বাছাই, সম্পাদনা, আলো-ছায়া ঠিক করা, ভিডিওর সময়সীমা নির্ধারণ, ট্রেন্ড অনুযায়ী গান নির্বাচন এবং দর্শকের পছন্দ বিবেচনা করা—সব মিলিয়ে একটি পোস্ট তৈরি করা সময়সাপেক্ষ। অনেক ক্ষেত্রে এসব প্রক্রিয়া শিল্পীদের সৃজনশীল মনোযোগকে প্রভাবিত করতে পারে। ফলে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পিত কনটেন্ট পরে আর প্রকাশ না করার ঘটনাও দেখা যায়।

এ প্রসঙ্গে বিনোদন বিশ্লেষকদের মত, শিল্পীদের মানসিক সুস্থতা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি ও প্রকাশের চাপ থেকে বিরতি নেওয়া, ব্যক্তিগত সময়কে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে নিজস্ব জীবন ও সৃজনশীলতাকে সংরক্ষণ করা—এসবই শিল্পীদের সুস্থভাবে কাজ চালিয়ে যেতে সহায়তা করে।

সাদিয়া আয়মানের সাম্প্রতিক পোস্ট এই বাস্তবতার প্রতিফলন বলেই মনে করছেন অনেকে। অভিনয়, দৈনন্দিন ব্যস্ততা এবং বিভিন্ন কাজের চাপের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিয়মিত উপস্থিতি বজায় রাখা অনেক সময় তাদের কাছে অতিরিক্ত দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। তাঁর বক্তব্য এবং নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে, কনটেন্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে মানসিক প্রস্তুতি ও আগ্রহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে কাজ করে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাদিয়ার পোস্ট ভবিষ্যতে তাঁর অনলাইন কার্যক্রম বা কনটেন্ট প্রকাশে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না—তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে তাঁর এই অভিজ্ঞতা শিল্পীসহ সাধারণ ব্যবহারকারীর মধ্যেও আলোচনার সৃষ্টি করেছে। ডিজিটাল যুগে কনটেন্ট প্রকাশের প্রক্রিয়া ও চাপ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করেছে।

বিনোদন