এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার উত্তরাংশে বিশেষ অভিযান

এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার উত্তরাংশে বিশেষ অভিযান

জাতীয় ডেস্ক

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) রাজধানীর উত্তর অঞ্চলে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি রোধ ও ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। শুক্রবার ২১ নভেম্বর শুরু হওয়া এ কার্যক্রমে সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি এলাকায় মশক নিধনকর্মীরা অংশ নিচ্ছেন। ডিএনসিসির এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো আবাসিক এলাকা, প্রতিষ্ঠান ও খোলা স্থানে মশার লার্ভা ধ্বংস করে ডেঙ্গুর বিস্তার প্রতিরোধ করা।

ডিএনসিসির কর্মকর্তারা জানান, বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বাড্ডার একতা সোসাইটি এলাকায় লার্ভিসাইডিং, নোভালুরন ট্যাবলেট প্রয়োগ, ফগিং, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ সময় হুইল ব্যারো ও স্প্রে মেশিন ব্যবহার করে সম্ভাব্য সব উৎপত্তিস্থলে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও বাড়ির প্রবেশপথে স্টিকার লাগানো হয়, যাতে মশার প্রজননস্থল সম্পর্কে সতর্কতা বজায় থাকে।

মশার উৎপত্তিস্থল শনাক্ত ও ধ্বংসে সিটি কর্পোরেশন বাসাবাড়ির মালিকদের উদ্দেশে নোটিশ প্রদান শুরু করেছে। অভিযানে অংশ নেওয়া সূত্র জানায়, আবাসিক ভবনের ভেতরে লার্ভা পাওয়া গেলে প্রাথমিকভাবে সতর্কতামূলক নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এসব চিঠিতে মশার বিস্তার রোধে মালিকদের নিজ নিজ ভবন ও প্রতিষ্ঠানের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বর্ষা ও শুষ্ক—উভয় মৌসুমেই মশার প্রজনন বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে কর্পোরেশন নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম ও জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে সরকারি, আধা-সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন স্থাপনায় পড়ে থাকা অব্যবহৃত পাত্র, প্লাস্টিক ড্রাম, বালতি, ফুলের টব, টায়ার, কমোড, ডাবের খোসা বা নারিকেলের মালা—এসবের ভেতরে জমে থাকা স্থির পানি এডিস মশার প্রজননের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে। একইভাবে বাসাবাড়ির ছাদ বাগান, লিফটের গর্ত, ওয়াসার ওয়াটার মিটার বা বেজমেন্টেও অল্প পরিমাণ পানি জমে থাকলে সেখানে দ্রুত লার্ভা জন্ম নিতে পারে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, খোলা জলাশয়ের কচুরিপানা, জলজ আগাছা বা ময়লা-আবর্জনাযুক্ত স্থির পানিও মশার বিস্তারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এসব স্থান নিয়মিত পরিষ্কার না করলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সিটি কর্পোরেশন পর্যাপ্ত জনবল ও সরঞ্জাম দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও মশার উৎপত্তিস্থল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে জনসাধারণের সক্রিয় সহযোগিতা অপরিহার্য।

ডিএনসিসি জানিয়েছে, মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাড়ির মালিকদের নির্দেশনা প্রদান, স্থানীয় পর্যায়ে তদারকি জোরদার, নিয়মিত পরিদর্শন এবং জরুরি অবস্থায় দ্রুত প্রতিক্রিয়ার ব্যবস্থা। সিটি কর্পোরেশন মনে করে, নগরবাসী নিজ নিজ স্থাপনা পরিষ্কার রাখলে এবং পানি জমে না থাকতে দিলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।

চিঠিতে বাসাবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্তদের আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে নিজ নিজ স্থাপনার ভেতরে ও আশেপাশে থাকা সম্ভাব্য মশার উৎপত্তিস্থল পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিলে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯-এর ৫ম তফসিলের সংশ্লিষ্ট ধারার ভিত্তিতে মামলা ও অর্থদণ্ড আরোপের সতর্কতাও উল্লেখ করা হয়েছে।

ডিএনসিসির কর্মকর্তাদের মতে, চলমান বিশেষ অভিযান নিয়মিত কার্যক্রমের বাইরে অতিরিক্ত গুরুত্ব বহন করে। কারণ আবাসিক এলাকা ও অগোচরে থাকা ছোট ছোট স্থানে পানি জমে থাকাই ডেঙ্গুর বিস্তারের অন্যতম কারণ। তাই এসব স্থানে লার্ভা ধ্বংসের পাশাপাশি বাসিন্দাদের সচেতনতা বাড়ানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

সিটি কর্পোরেশন জানিয়েছে, যৌথ উদ্যোগ ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। নাগরিকদের সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং উৎপত্তিস্থল-মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হলে রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন ও মশকমুক্ত নগরীতে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ শীর্ষ সংবাদ