গণভোট আইন শিগগিরই প্রণয়নের প্রস্তুতি

গণভোট আইন শিগগিরই প্রণয়নের প্রস্তুতি

জাতীয় ডেস্ক

রাজধানীতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন যে সরকার আগামী তিন থেকে চার কার্যদিবসের মধ্যেই গণভোট আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ ব্রিফিংয়ে তিনি আইন প্রণয়নের সময়সূচি, প্রেক্ষাপট এবং সাম্প্রতিক আইনগত অগ্রগতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, গণভোট আইন প্রণয়ন বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হচ্ছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, আইনের খসড়া প্রস্তুত ও সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে আলোচনা কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কয়েক কার্যদিবসের মধ্যেই প্রস্তাবিত আইনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রণয়ন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা সাম্প্রতিক একটি উচ্চ আদালতের রায়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন, যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পূর্ববর্তী রায় পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নতুন রায়ের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরায় কার্যকর হওয়ার পথ তৈরি হয়েছে। আইনি ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই ব্যবস্থা সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরই কার্যকর হয়—ফলে আগামী সংসদ নির্বাচনের পর এই কাঠামো বাস্তবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে বর্তমান সময়ে সংসদের অস্তিত্ব নেই এবং ভবিষ্যতে গঠিত সংসদ ভেঙে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের আইনি বাধ্যবাধকতা কার্যকর হবে।

ড. আসিফ নজরুল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঐতিহাসিক পটভূমি সম্পর্কেও আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বহু রাজনৈতিক ও সামাজিক দাবি-দাওয়ার পর এই ব্যবস্থা একসময় দেশে প্রতিষ্ঠা পায় এবং বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনে তা প্রয়োগ করা হয়। অতীতে এই ব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোকে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করা হতো—এমন মন্তব্য তিনি তুলে ধরেন। তার মতে, ক্ষমতাসীন দলগুলোর প্রতি জনমতের প্রতিক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে পূর্ববর্তী রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে এটি নিয়ে আইনগত বিতর্ক চলছিল। রায়ের ব্যাখ্যা ও ফলাফল নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ উচ্চ আদালতের রায় এই বিতর্কের অবসানে নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছে বলে তিনি জানান।

ব্রিফিংয়ে বক্তা আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালের ফলে ভবিষ্যতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নতুনভাবে বিন্যস্ত হতে পারে। সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দলীয় সরকার গঠন এবং সেই সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন—এই কাঠামো কার্যকর হলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সার্বিক ধরনে পরিবর্তন আসতে পারে। আইন উপদেষ্টা জানান, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন পক্ষের আস্থা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য এই ব্যবস্থা অতীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

গণভোট আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি প্রণয়ন হলে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণের সরাসরি মতামত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। গণভোট ব্যবস্থা চালু হলে রাষ্ট্রীয় নীতি ও গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রশ্নে জনগণের অংশগ্রহণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে এই আইন ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে আরও শক্তিশালী করবে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গণভোট আইনের খসড়ায় প্রক্রিয়া, তদারকি, দায়িত্ব বণ্টন, ফলাফল ঘোষণার পদ্ধতি এবং আইনি বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে বিস্তারিত বিধান যুক্ত করা হয়েছে। খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত গ্রহণ এবং প্রযুক্তিগত দিকগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

ব্রিফিংয়ের শেষাংশে আইন উপদেষ্টা জানান, গণভোট আইন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সম্পর্কিত সাম্প্রতিক আইনগত অগ্রগতি দেশের সংবিধান ও নির্বাচনী কাঠামোতে প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত ও আদালতের নির্দেশনা মিলিয়ে আগামী কয়েক মাসে দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে।

প্রস্তাবিত গণভোট আইন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার সম্ভাব্য পুনর্বহাল—উভয় বিষয়ই বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে। আইন বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া আরও কাঠামোবদ্ধ ও আইনি ভিত্তিসম্পন্ন হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ