জাতীয় ডেস্ক
দেশের বিভিন্ন জেলায় ভূমিকম্পের প্রভাবে ঘরবাড়ি ধসে পড়া ও সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় প্রাণহানি এবং আহতের ঘটনার প্রতি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক শোকবার্তায় তিনি এই শোক ও সমবেদনা জানান। ভূমিকম্পের ফলে উদ্ভূত ক্ষয়ক্ষতি এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে তিনি জানান।
শোকবার্তায় উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন জেলায় ভবন ও স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি, ধস, আতঙ্কে ছুটোছুটি এবং অন্যান্য দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে পাঁচজনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী, গাজীপুর অঞ্চলের একাধিক কারখানা শ্রমিক এবং ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীসহ দেশের আরও কয়েকটি জেলায় প্রায় একশর কাছাকাছি মানুষ আহত হয়েছেন। যাদের অনেকেই ভবন থেকে দ্রুত নামার সময়, ভারী জিনিসপত্র পড়ে যাওয়া কিংবা স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে আহত হন।
প্রধান উপদেষ্টা নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, জাতীয় দুর্যোগের এ পরিস্থিতিতে জনগণের পাশে দাঁড়ানো রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং সরকার এ দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা আরও জোরদার করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত করতে প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং অন্যান্য জরুরি সেবা সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে নির্দেশ প্রদান করেন।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী অঞ্চলে। ভূতাত্ত্বিক ও আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক বিশ্লেষণে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে ভূমিকম্পের মাত্রা এবং ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ভবন কাঠামোর ঝুঁকি এবং নাগরিক স্থাপনার সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দেশের বড় শহরগুলোতে বহুতল ভবন বৃদ্ধি, পুরনো স্থাপনার অরক্ষিত অবস্থা এবং অপর্যাপ্ত দুর্যোগ প্রস্তুতি এ ধরনের পরিস্থিতিতে ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। অতীতের বেশ কয়েকটি ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতার আলোকে বিশেষজ্ঞরা ভবন কোড কঠোরভাবে প্রয়োগ, পুরনো ভবন সংস্কার এবং দুর্যোগ প্রস্তুতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে আসছেন।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ বিবরণ সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে দ্রুত অগ্রাধিকারভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ, ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নির্ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে অতিরিক্ত জরুরি ত্রাণ ও সহায়তা বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনগণের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা সকলকে ধৈর্য বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জনগণ দায়িত্বশীলভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সহযোগিতা করবেন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করবেন। জরুরি অবস্থায় নিরাপদ স্থানে অবস্থান, অরক্ষিত ভবন এড়িয়ে চলা এবং যেকোনো দুর্ঘটনার খবর দ্রুত স্থানীয় প্রশাসনকে জানানোর পরামর্শ দেন তিনি।
দেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা এবং আঞ্চলিক ভূতাত্ত্বিক তথ্যসূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার মধ্যে অবস্থান করায় উল্লেখযোগ্য মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা সব সময়ই বিদ্যমান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্যোগের প্রভাব কমাতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রস্তুতিও জরুরি। ভবন নির্মাণে নিয়ম মেনে চলা, স্কুল–কলেজে দুর্যোগ প্রস্তুতি শিক্ষা, গণপরিবহনে নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জরুরি মুহূর্তে যোগাযোগব্যবস্থা সচল রাখা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা পুনর্ব্যক্ত করেন যে, সকল সরকারি সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে এবং ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত এবং নাগরিকদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।


