অর্থনীতি ডেস্ক
দেশের খুচরা বাজারে সোনার দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য পতন এবং স্থানীয় পাইকারি পর্যায়ে তেজাবি সোনার দাম কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে পুনর্নির্ধারণ করা এ মূল্য আগামী শুক্রবার থেকে কার্যকর হবে। নতুন দামে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট সোনার ভরি মূল্য দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার টাকার কিছু বেশি, যা পূর্বের তুলনায় ভরিতে এক হাজারেরও বেশি টাকা কম।
বাজুসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, খুচরা পর্যায়ে সোনার বিভিন্ন ক্যারেটের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সাম্প্রতিক ওঠানামার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। বৈশ্বিক বাজারে বর্তমানে প্রতি আউন্স সোনার মূল্য ৪ হাজার ১০০ ডলারের নিচে অবস্থান করছে, যা সাম্প্রতিক সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পতন। এই পরিস্থিতি আমদানি নির্ভর দেশগুলোতে যেমন প্রভাব ফেলেছে, তেমনি বাংলাদেশের খুচরা বাজারেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।
দাম সমন্বয়ের ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ১৬৭ টাকা। একই সঙ্গে ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৯৬ টাকা। ১৮ ক্যারেটের সোনার ভরি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৩১৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার নতুন দাম ১ লাখ ৪১ হাজার ৬৪৮ টাকা। প্রতিটি মানের সোনার ক্ষেত্রে পূর্বের নির্ধারিত দামের চেয়ে ভরিতে সর্বোচ্চ এক হাজার ৩৫৩ টাকা পর্যন্ত হ্রাস কার্যকর হবে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক অর্থনীতি বর্তমানে মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রধান অর্থনীতিগুলোর প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, সুদের হার পরিবর্তন এবং বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি হিসাব—এসব কারণে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার চাহিদা ওঠানামা করছে। গত কয়েক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য হ্রাসের ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের বাজারেও চাপ সৃষ্টি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে বাজুসের মূল্য সমন্বয়ের সিদ্ধান্তকে চলমান বৈশ্বিক বাজার প্রবণতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার মূল্য কমে যাওয়াও এ সমন্বয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। দেশের অভ্যন্তরে কাঁচামালের এই মূল্য পরিবর্তন খুচরা দামের ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, মূল্য হ্রাসের ফলে উৎসব মৌসুমের আগে ক্রেতাদের আগ্রহ কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে মাঝারি আয়ের মানুষের জন্য সোনার দাম কমানো বাজারে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বাজারের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা অনেকটাই নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক বাজারের চলমান পরিস্থিতির ওপর।
এদিকে রুপার বাজারে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। পূর্বের দামই বহাল থাকবে। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার মূল্য ৪ হাজার ২৪৬ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। ২১ ক্যারেটের দাম ৪ হাজার ৪৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ৩ হাজার ৪৭৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপার মূল্য ২ হাজার ৬০১ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্য সমন্বয় বাজারকে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। সোনার আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সঙ্গে স্থানীয় বাজারের দ্রুত সামঞ্জস্য সাধন ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্যই উপকারী। ক্রেতারা বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সঠিক দামে পণ্য ক্রয়ের সুযোগ পান এবং ব্যবসায়ীরা বাজার স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হন।
ভবিষ্যতে সোনার দামে আরও পরিবর্তন আসবে কি না, তা অনেকাংশেই নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুদের হার, আমদানি ব্যয় এবং বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের ওঠানামার ওপর। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকলে সোনার দাম আরও পরিবর্তিত হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে স্থানীয় বাজারেও নতুন সমন্বয় প্রয়োজন হতে পারে।
সোনার দাম কমানোর এই সিদ্ধান্ত দেশের গয়না ব্যবসায় বাজারে ক্রয়-বিক্রির প্রতি আস্থা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ আশা প্রকাশ করেছে। নতুন দাম কার্যকর হলে বাজার গতিশীলতা কিছুটা বাড়বে এবং উৎসবমুখর সময়ে ক্রেতাদের চাপও কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে তারা মনে করছেন।


