চিত্রনায়িকা পপির পারিবারিক সম্পদ ও প্রতারণা নিয়ে অভিযোগ

চিত্রনায়িকা পপির পারিবারিক সম্পদ ও প্রতারণা নিয়ে অভিযোগ

বিনোদন ডেস্ক

জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পপি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক বিরোধ এবং দীর্ঘ অনুপস্থিতি নিয়ে আলোচনায় ছিলেন। চলচ্চিত্রে দীর্ঘদিন সক্রিয় থাকলেও ব্যক্তিগত নানা জটিলতার কারণে তিনি আলোচনার কেন্দ্রে ফিরেছেন। তিনি দাবি করেছেন, বিয়ে ও সন্তান জন্মের পরও স্থিতিশীল সংসার করতে পারছেন না মূলত সম্পদ-সংক্রান্ত বিরোধ এবং প্রতারণার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতার কারণে।

অভিনেত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, তার কয়েক বছরের অনুপস্থিতির সময় এবং চলচ্চিত্র থেকে উপার্জিত অর্থের একটি বড় অংশ বিনিয়োগের পর খুলনায় যে সম্পত্তি গড়ে ওঠে, সেটি এখন আর তার নিয়ন্ত্রণে নেই। পপি জানিয়েছেন, এসব সম্পদের বিষয়ে তিনি পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং পরিচিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

পপির দাবি, এক সময় পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে যিনি তাদের বাড়িতে অবস্থান করতেন, পরবর্তীতে তিনি তার চাচাতো বোনকে বিয়ে করেন এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। পপির অভিযোগ, ওই ব্যক্তি তার সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি অভিযোগ করেছেন যে উক্ত ব্যক্তি অতীতে রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করেছেন এবং বিভিন্ন শক্তিশালী ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের কথা উল্লেখ করে ক্ষমতা প্রদর্শন করতেন। তবে এসব তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

অভিনেত্রী আরও দাবি করেন যে, চলচ্চিত্রে কাজ করে অর্জিত অর্থের বেশির ভাগ তিনি পরিবারের পরামর্শে খুলনায় বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করেছিলেন। তার ভাষ্যে, বাবা-মা ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা তাকে বিভিন্ন সময়ে জমি কেনার জন্য উৎসাহিত করেন এবং তিনি তাদের পরামর্শে সে বিনিয়োগ করেন। পপির অভিযোগ, পরবর্তীতে ওই জমি ও সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ তিনি হারিয়ে ফেলেন। তার দাবি, জমির মালিকানাসংক্রান্ত স্পষ্ট নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তিনি বাস্তবে সম্পত্তির দখল বা হস্তান্তরের নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না।

তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্য হিসেবে তিনি বিভিন্ন আত্মীয়কে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন—বাড়িঘর সংস্কার, পারিবারিক খরচ, বিবাহ আয়োজনসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু এখন উল্টো তার বিরুদ্ধে প্রতারণার ঘটনা ঘটছে এবং তিনি নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করছেন। পপির অভিযোগ, তিনি যখন খুলনায় ফেরেন, তখন দেখেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা নিজের মতো জায়গা-জমি করে নিলেও তিনি নিজের সম্পত্তি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন না।

ঢাকায় কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি না থাকার বিষয়েও পপি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, অভিনয়জীবনে দীর্ঘ সময় কাজ করলেও ঢাকায় কোনো ফ্ল্যাট বা জমি ক্রয় করতে পারেননি। চলচ্চিত্র শিল্পের বর্তমান অবস্থার কারণে ভবিষ্যতে নতুন করে সম্পদ তৈরি করাও তার কাছে কঠিন বলে মনে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে খুলনায় অবস্থিত সম্পত্তিই তার একমাত্র ভরসা, যা তিনি বর্তমানে নিজ দখলে পাচ্ছেন না বলে দাবি করেন।

আইনি সহায়তার বিষয়ে পপি জানান, তিনি বিভিন্ন সময় থানায় গিয়েও কার্যকর সহযোগিতা পাননি। তিনি বলেছেন, তার সন্তানকে নিয়ে আদালত ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার দফতরে যেতে হচ্ছে, যা শিশুর ওপর মানসিক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে বিগত বছরগুলোতে প্রশাসনিক সহায়তার অভাবে তিনি প্রতিকার পাননি এবং এখনো সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন না।

পপি বলেন, নিজের উপার্জিত অর্থ ও সম্পত্তির ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আইনি সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কোথায় গেলে কার্যকর সাহায্য পাওয়া যাবে—তা নিয়ে তিনি অনিশ্চয়তায় আছেন। তার দাবি, প্রতারণা ও সম্পত্তি বিরোধের কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এবং ব্যক্তিজীবনেও স্থিতিশীলতা ফিরে পাচ্ছেন না।

বর্তমানে তিনি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সম্পত্তির বৈধ অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি পথে এগিয়ে যেতে চান বলে জানিয়েছেন। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি এবং তদন্ত-প্রক্রিয়ায় বিষয়গুলো কীভাবে আগাবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। পপির দাবি, ন্যায়বিচার ও সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সহায়তা না পাওয়া পর্যন্ত তার দৈনন্দিন জীবন ও পারিবারিক স্থিতি স্বাভাবিক হওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।

বিনোদন