জাতীয় ডেস্ক
সম্প্রতি সংঘটিত ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন জেলায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে জরুরি আর্থিক সহায়তা প্রদান শুরু করেছে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জেলা প্রশাসনগুলোর মাধ্যমে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা ও আহতদের প্রত্যেককে ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। সহায়তা কার্যক্রম ইতোমধ্যে চলমান রয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রয়োজন অনুযায়ী তা অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার পাঠানো সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, ভূমিকম্পের পরপরই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের জরুরি সাড়াদান কেন্দ্র সক্রিয় করা হয়। কেন্দ্রের টেলিফোন নম্বর প্রকাশ করে জানানো হয়, এখান থেকে সারাদেশের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্যে দেখা যায়, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও মাগুরা জেলায় উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব জেলার মাঠ প্রশাসন সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল, চিকিৎসাকেন্দ্র এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুত করেছে।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা জেলায় বিশেষত মহানগর এলাকায় ৪ জন নিহত ও ৫৯ জন আহত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে ১ জন নিহত ও ১৮ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। নরসিংদী জেলায় হতাহতের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, যেখানে ৫ জন নিহত ও ১১০ জন আহত হয়েছেন। গাজীপুরে ২৫২ জন এবং মাগুরায় ২২ জন আহত হওয়ার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে দেশজুড়ে মোট ১০ জন নিহত এবং ৪৬১ জন আহত হয়েছেন বলে সরকারি তথ্যসূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সাড়াদান কেন্দ্র ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে সার্বক্ষণিক সমন্বয় বজায় রাখা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জরুরি প্রয়োজন যাচাই করে সংশ্লিষ্টদের তালিকা তৈরি করছেন। নিহত এবং গুরুতর আহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা ছাড়াও প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে সহায়তা দ্রুত বিতরণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সরকারি সেবার নিশ্চয়তা প্রদান করা যায়।
সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে অনেক আহত ব্যক্তি ইতোমধ্যে বাড়ি ফিরে গেছেন। চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের অবস্থা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র নিরূপণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে। ভবন, অবকাঠামো, সড়ক এবং অন্যান্য স্থাপনার ক্ষতির মাত্রা যাচাই করতে প্রকৌশল বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা পরিদর্শনে নেমেছেন।
ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ সম্পন্ন হলে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে, যা পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা হবে। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা চিহ্নিতকরণ এবং দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে। সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামোর অংশ হিসেবে, ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ঝুঁকি হ্রাস কর্মসূচি আরও জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্প-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবীরা একযোগে কাজ করছেন। নাগরিকদের সচেতন থাকতে এবং প্রয়োজন ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ভিড় না করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার নিরাপত্তা ও উদ্ধার কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে মাঠ প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
সরকারি সংস্থাগুলো আশা করছে, প্রাথমিক সহায়তা কার্যক্রমের পর ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রয়োজন অনুযায়ী আরও সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে এবং ভবিষ্যতে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।


