জাতীয় ডেস্ক
সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের প্রভাবে রাজধানী ঢাকার একাধিক মেট্রোরেল স্টেশনের বিভিন্ন স্থাপনায় ফাটল দেখা দিয়েছে। শুক্রবার বিকেল থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন স্টেশনে পরিদর্শন ও প্রাথমিক নিরাপত্তা মূল্যায়ন শুরু করেছে। মেট্রোরেলের চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও স্টেশনগুলোর কাঠামোগত অবস্থান নিয়ে নতুন করে সতর্কতা জোরদার করা হয়েছে।
পরিদর্শনে দেখা গেছে, কারওয়ান বাজার ও বিজয় সরণি স্টেশনের বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন কক্ষের ফ্লোরে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। বিজয় সরণি স্টেশনের সাব-স্টেশনের প্রবেশদ্বারের দেয়ালেও ফাটলের চিহ্ন দেখা যায়। পল্লবী স্টেশনের বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন কক্ষের ফ্লোর এবং স্টেশন নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল শনাক্ত হয়েছে। এসব স্থানের অবস্থা মূল্যায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কক্ষগুলো আংশিকভাবে সীমিত প্রবেশাধিকার বলবৎ করেছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, মিরপুর ১১ স্টেশনের বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনের ফ্লোরে ফাটল দেখা গেছে। মিরপুর ১০ স্টেশনের অভ্যন্তরে কয়েকটি টাইলসে ফাটল শনাক্ত করা হয়। ফার্মগেট স্টেশনের যাত্রী লিফট কোরের ভেতরের দেয়ালে ফাটলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এসব স্টেশনের কর্মীরা ফাটলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন বলে জানা গেছে।
পল্লবী স্টেশন পরিদর্শনের সময় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ভেতরের দেয়ালে স্পষ্ট ফাটল দেখা যায়। সেখানে উপস্থিত কর্মীরা জানান, ঘটনার পর এলাকাটি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ফাটলগুলো নতুন নাকি আগের তা শনাক্ত করতে অতিরিক্ত পরিমাপ করা হচ্ছে। জরুরি যোগাযোগব্যবস্থার কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে টেকনিক্যাল টিম সংশ্লিষ্ট কক্ষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে।
কারওয়ান বাজার স্টেশনের সাব-স্টেশন কক্ষও পরিদর্শনের সময় বন্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। নিরাপত্তার স্বার্থে কক্ষটিতে সাময়িক প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। স্টেশনে কর্মরত এক কর্মকর্তা জানান, ভূমিকম্পের পর কিছু কর্মীর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তবে নিরাপত্তা মূল্যায়ন কার্যক্রম চলমান থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মিরপুর ১০ ও মিরপুর ১১ স্টেশনের কর্মীরা জানিয়েছেন, স্টেশনের ভেতরের বিভিন্ন অংশে ক্ষুদ্র ধরনের ফাটল দেখা গেছে। এগুলোর মাত্রা ও গভীরতা নির্ধারণে বিশেষজ্ঞ দল স্থানগুলো চিহ্নিত করে পরিদর্শন করছে। প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, অধিকাংশ ফাটল টাইলস বা অভ্যন্তরীণ ফ্লোরের পৃষ্ঠে সীমাবদ্ধ, তবে কাঠামোগত ক্ষতির সম্ভাবনা যাচাই করতে অতিরিক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
ফাটলের বিষয়ে জানতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, পরিদর্শনে ফাটল শনাক্ত হয়েছে এবং এদের বেশিরভাগই গুরুতর নয়। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা প্রতিটি স্থান পরীক্ষা করে দেখছেন এবং প্রয়োজনীয় হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রেখে নিরাপত্তা মূল্যায়ন করার প্রয়োজন ছিল কি না—এ বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, ভূমিকম্পের পর পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রায়াল রান পরিচালনা করা হয়েছে। পরীক্ষায় যান্ত্রিক বা কাঠামোগত কোনো ঝুঁকি পাওয়া না যাওয়ায় চলাচল স্বাভাবিকভাবে চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে একাধিক টেকনিক্যাল টিম নিযুক্ত রয়েছে।
সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ধাক্কায় শহরের অবকাঠামো নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা আরও গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেট্রোরেল স্টেশনগুলো উচ্চমানের প্রকৌশল কাঠামো ব্যবহার করে নির্মিত হলেও ভূমিকম্পের পর ছোটখাটো ক্ষতিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। কারণ এসব ক্ষতি ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যার পূর্বাভাস হতে পারে। তাই সময়মতো মেরামত, পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় শক্তিবৃদ্ধি অবকাঠামোর দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে সহায়ক হতে পারে।
বর্তমানে ফাটল শনাক্ত হওয়া প্রতিটি স্থান বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রকৌশলীরা স্টেশনের লোড বহনক্ষমতা, যাত্রী চলাচলের নিরাপত্তা এবং যান্ত্রিক সরঞ্জামের কর্মক্ষমতা পর্যালোচনায় কাজ করছেন। প্রয়োজনীয় রিপোর্ট তৈরি হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা তা পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যবহার করবে। ভূমিকম্পের পরপরই নিরাপত্তা জোরদার করা এবং দ্রুত পরিদর্শন শুরু করার ফলে যাত্রীসেবায় বিঘ্ন না ঘটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মেট্রোরেলের বিভিন্ন স্টেশনে শনাক্ত ফাটলগুলোকে কেন্দ্র করে এখন কাঠামোগত নিরাপত্তা, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা আরও গুরুত্ব পাচ্ছে। চলমান তদন্ত ও পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত সংস্কার বা শক্তিবৃদ্ধির কাজ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।


