বঙ্গোপসাগরে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা, আবহাওয়া অনুকূলে শক্তি বাড়াচ্ছে নিম্নচাপ

বঙ্গোপসাগরে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা, আবহাওয়া অনুকূলে শক্তি বাড়াচ্ছে নিম্নচাপ

আবহাওয়া ডেস্ক

দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি দুর্বল নিম্নচাপ দ্রুত তীব্র হয়ে ওঠার লক্ষণ দেখা যাওয়ায় আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন একটি ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আবহাওয়ার প্রাথমিক বিশ্লেষণ বলছে, নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে আরও ঘনীভূত হচ্ছে এবং শিগগিরই তা শক্তিশালী নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে পরবর্তী পর্যায়ে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বর্তমানে নিম্নচাপটি দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগরের ওপর বিরাজ করছে। সেখান থেকে এটি উত্তর-পশ্চিমমুখী হয়ে ক্রমান্বয়ে শক্তি বাড়াচ্ছে বলে আবহাওয়া বিভাগগুলোর পর্যবেক্ষণে জানা গেছে। তবে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি কোন দিকে অগ্রসর হবে বা কোন স্থানে আঘাত হানতে পারে—তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্ববর্তী পর্যায়গুলো অতিক্রমের পরই এর গতিপথ স্পষ্ট হবে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, ২৫ নভেম্বরের মধ্যে দুর্বল নিম্নচাপটি দক্ষিণ আন্দামান সাগরের কাছাকাছি আরও ঘনীভূত হতে পারে। মালাক্কা প্রণালী ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের পরিবেশগত পরিস্থিতি নিম্নচাপটির শক্তি বৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে অনুকূল ভূমিকা রাখছে। বিশেষভাবে ম্যাডেন-জুলিয়ান অসিলেশন পর্যায়ের সক্রিয়তা নিম্নচাপটির উর্ধ্বগতি ও তীব্রতা বৃদ্ধিকে সহায়তা করছে। এসব কারণেই আবহাওয়াবিদরা এতে উল্লেখযোগ্য শক্তি সঞ্চয়ের প্রবল সম্ভাবনা দেখছেন।

সমুদ্রের উপরিভাগে বিস্তৃত উষ্ণ জলরাশি এবং প্রশান্ত মহাসাগর থেকে প্রবেশ করা শক্তিশালী বাতাসের স্রোত নিম্নচাপটির সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরকে আরও ত্বরান্বিত করছে। একই সঙ্গে শীতল বাতাসের অনুপ্রবেশ না থাকায় এর ওপর কোনো প্রতিবন্ধক প্রভাব পড়ছে না। সাধারণত শীতল বাতাস নিম্নচাপের শক্তি সঞ্চয় কমিয়ে দেয়, কিন্তু বর্তমানে সেই প্রতিকূলতা না থাকায় সিস্টেমটি দ্রুত শক্তি অর্জন করছে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের ধারণা, চলমান সিস্টেমটি ২১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে আগামী ২ কিংবা ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। এর মধ্যে বিশেষ করে ২৬ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়টিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হচ্ছে, কারণ এ সময়েই নিম্নচাপটির তীব্রতা বাড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। পূর্বাভাস বলছে, এই পর্যায়ে নিম্নচাপটি দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অন্ধ্র প্রদেশ ও ওড়িশা উপকূলের নিকটবর্তী অঞ্চলে প্রবল আকার ধারণ করতে পারে। সেখান থেকে পরবর্তী শক্তি সঞ্চয় ঘটলে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পথ তৈরি হবে।

এই আবহাওয়া সিস্টেমের ফলে বঙ্গোপসাগরে বাতাসের গতিবেগ দ্রুত বাড়তে পারে। ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ২৬ নভেম্বর গতিবেগ বাড়তে বাড়তে ৬০ থেকে ৭০ কিংবা ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। ২৭ নভেম্বর তা আরও তীব্র হয়ে ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব লক্ষণ ঘূর্ণিঝড় গঠনের সাধারণ পূর্বাভাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সমুদ্রের উপরিস্তর, বায়ুচাপের বৈচিত্র্য এবং আঞ্চলিক আবহাওয়ার বর্তমান চিত্র বিবেচনায় বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, সিস্টেমটি ক্রমশ সুসংগঠিত হচ্ছে। যদিও এখনো এর চূড়ান্ত গতিপথ নির্ধারিত নয়, তবুও উপকূলীয় এলাকায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আগের দিনগুলোতে আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, যা ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিম্নচাপটির অগ্রগতির ওপর নজর রাখতে হবে আগামী কয়েক দিন। অবস্থার আরও পরিবর্তন বা নতুন তথ্য পাওয়া গেলে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ ও প্রভাব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থানরত ব্যক্তিদের জন্য এই সময় বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন হতে পারে। আবহাওয়া পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছে, পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনশীল চরিত্র বিবেচনা করে পরবর্তী আপডেটগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অনুসরণ করা জরুরি।

আবহাওয়া