রাজনীতি ডেস্ক
জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সেমিনারে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কিত আলোচনায় ‘গণহত্যা’–সংক্রান্ত ইঙ্গিত বা মন্তব্য জাতীয়ভাবে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে এবং রাজনৈতিক পরিবেশকে উত্তেজিত করতে সক্ষম। রোববার ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওই সেমিনারে তিনি সাম্প্রতিক এক রাজনৈতিক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এসব মন্তব্য করেন।
সেমিনারে রুহুল কবির রিজভী বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার সম্প্রতি প্রকাশিত বক্তব্যে নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট একই দিনে হলে ‘গণহত্যা’ ঘটতে পারে বলে যে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে, তা দেশের জনগণের মধ্যে অযথা আতঙ্ক সৃষ্টির কারণ হতে পারে। তার মতে, এমন বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং গণতান্ত্রিক বিতর্ককে অস্বাস্থ্যকর দিকে ঠেলে দিতে পারে।
তিনি উল্লেখ করেন যে, গণতন্ত্রে নীতি নিয়ে বিতর্ক এবং মতবিনিময় স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও ‘গণহত্যা’ সম্পর্কিত ইঙ্গিত কোনোভাবেই দায়িত্বশীল বক্তব্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। তিনি বলেন, নির্বাচন ও গণভোটের সময়সূচি, ব্যয় বা সম্ভাব্য কাঠামো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত থাকতে পারে, তবে এসব বিষয় নিয়ে শান্তিপূর্ণ ও যুক্তিনির্ভর আলোচনা হওয়া উচিত। তার মতে, গুরুতর মানবাধিকার–সম্পর্কিত শব্দ ব্যবহার অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দেশে গণতন্ত্রের চর্চা নানা সময়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এখনো একটি চ্যালেঞ্জ। তিনি উল্লেখ করেন যে, গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা শক্তিশালী করতে হলে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অপরিহার্য। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণই রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিনিধিকে নির্বাচন করবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে।
তিনি সতর্ক করেন যে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়লে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তার মতে, রাজনৈতিক বিভাজন বা সংঘাত যদি গভীরতর হয় এবং যদি গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রতি আস্থা কমে যায়, তবে রাষ্ট্র পরিচালনা ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
সেমিনারে রিজভী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বক্তব্য বিকৃত করার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য এআই ব্যবহার করে বিকৃত করা হচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক সমাজে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যের স্বচ্ছতার জন্য হুমকি। তার মতে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হেয় করার জন্য প্রযুক্তির অপব্যবহার সামাজিক আস্থা নষ্ট করতে পারে এবং জনগণের তথ্য গ্রহণ প্রক্রিয়াকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসন বা রাষ্ট্র পরিচালনার ওপর কোনো রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তারের ইঙ্গিত সংক্রান্ত বক্তব্য গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি দাবি করেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দলীয় প্রভাব বৃদ্ধি পেলে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্বাধীনতা হারায় এবং আইনের শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে। তিনি সতর্ক করেন যে, প্রশাসনিক কাঠামো যদি কোনো দল বা ব্যক্তির প্রতি অতিমাত্রায় অনুগত হয়ে পড়ে, তাহলে গণতান্ত্রিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এবং শক্তিশালী স্বৈরশাসনের পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
সেমিনারে বিএনপির আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণ, রাজনৈতিক সমঝোতা, নির্বাচনী কাঠামোর উন্নয়ন এবং রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে, তবে বক্তব্য ও বিতর্ক এমন হতে হবে যা জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে শক্তিশালী করে।


