বিমান হামলায় গাজায় নিহত কমপক্ষে ২৪ ফিলিস্তিনি

বিমান হামলায় গাজায় নিহত কমপক্ষে ২৪ ফিলিস্তিনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক বিমান হামলায় গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে ২৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে কার্যকর থাকা যুদ্ধবিরতির মধ্যে এই হামলাগুলোকে গাজার কর্তৃপক্ষ নতুন করে লঙ্ঘনের ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছে। শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত এই হামলাগুলো সংঘটিত হয়।

গাজা সিটির উত্তরে প্রথম হামলাটি একটি বেসামরিক গাড়িকে লক্ষ্য করে চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাঝরাতে ওই এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং মুহূর্তের মধ্যে আশপাশের এলাকা ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। হামলার পর উদ্ধারকর্মীরা এসে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি এবং আশপাশের ভবন থেকে হতাহতদের সরিয়ে নেয়। চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে আহতদের ভিড় বাড়তে থাকে এবং হাসপাতালগুলোতে জরুরি সেবা জোরদার করা হয়।

পরবর্তীতে মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ ও নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরেও বিমান হামলার ঘটনা ঘটে। এসব স্থানে বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, রাতের অন্ধকারে টানা বিস্ফোরণের কারণে লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র বা খোলা জায়গায় যেতে বাধ্য হয়। ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলোর ধ্বংসস্তূপ থেকে বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করা হলেও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গাজা সিটির রিমাল এলাকায় ড্রোন হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২০ জনের বেশিরভাগেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানান, আহতদের মধ্যে বহু শিশু রয়েছে এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম ঘাটতির কারণে জরুরি সেবা দিতে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ ধরনের ধারাবাহিক হামলার ফলে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা আরও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

দেইর আল-বালাহ অঞ্চলে একটি আবাসিক বাড়িতে হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন। স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, হঠাৎ বিস্ফোরণে ভবনের কয়েকটি তলা ধসে পড়ে এবং আশপাশে থাকা মানুষজন আতঙ্কে নিরাপদ স্থানে সরে যান। এলাকায় উদ্ধারকাজ পরিচালনা করা হলেও বিস্ফোরণের ধ্বংসাবশেষের কারণে কাজ ধীরগতিতে এগোচ্ছে। বাড়ির আশেপাশের স্থাপনাগুলোতেও ক্ষতির চিহ্ন দেখা গেছে, যা সাম্প্রতিক হামলার তীব্রতাকে নির্দেশ করে।

গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় জানিয়েছে, ১০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরায়েল এখন পর্যন্ত ৪৯৭ বার তা লঙ্ঘন করেছে। এসব ঘটনায় মোট ৩৪২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু, নারী ও প্রবীণ ব্যক্তি রয়েছেন। কর্তৃপক্ষ বলেছে, ধারাবাহিক হামলার কারণে বেসামরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং মানবিক পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটছে।

গাজার প্রশাসনের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গের এসব ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং বিদ্যমান চুক্তির পরিপন্থী। তারা দাবি করে, বেসামরিক এলাকায় লক্ষ্য করে হামলা চালানো হলে মানবিক সংকট আরও তীব্র হবে এবং খাদ্য, পানি, চিকিৎসাসহ জরুরি সহায়তা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ইতোমধ্যে বহু পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং শরণার্থী শিবিরগুলোতে চাপ বেড়েছে।

অন্যদিকে ইসরায়েলি সরকারি কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় একজন হামাস যোদ্ধা ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলা চালানোর পর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ওই অভিযান পরিচালিত হয়। তারা দাবি করেছে যে, এ অভিযানে হামাসের পাঁচজন সিনিয়র সদস্য নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি এবং হামাসও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

একইদিন হামাস অভিযোগ করে যে, ইসরায়েল মনগড়া কারণ দেখিয়ে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে এবং এতে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়ছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারকে দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর রাখতে আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য, অন্যথায় সংঘাতের পরিধি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গাজায় পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে। মানবিক সহায়তা সংকট, নিরাপত্তাহীনতা এবং অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ধারাবাহিক হামলা ও যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন সংঘাতের সমাধানকে আরও কঠিন করে তুলছে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

আন্তর্জাতিক